Saturday 15 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিগো লাইভে’ পরিচয় জরেজুল-শামীমার, বন্ধুকে ফেরাতে নিজেই অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায় আশরাফুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৬ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৪৯

গ্রেফতার জরেজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিদেশে থাকাকালীন ‘বিগো লাইভ’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের মা শামীমা ইসলামের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে জরেজুল ইসলামের। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারলে জরেজুল ইসলামের বন্ধু আশরাফুলকে শামীমার মোবাইল নম্বর দেন বন্ধুকে এসব থেকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু আশরাফুল নিজেই একপর্যায়ে শামীমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘নিহত আশরাফুল হক দিনাজপুরের হিলি বন্দরের একজন পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী। তিনি গত ১১ নভেম্বর রাতে আশরাফুল রংপুর থেকে বন্ধু জরেজুলকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় পুলিশ জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটি ড্রাম থেকে ২৬ টুকরা খণ্ডিত একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত হয় এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আশরাফুলের বোন মর্গে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোহাম্মদ জরেজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ডিবি। তার দেখানো মতে সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি এবং ভাড়া করা বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্কচটেপ ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়।’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘গ্রেফতার জরেজুল একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। দেড় মাস পূর্বে সে দেশে আসে। বিদেশে থাকাকালীন জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ‘বিগো লাইভ’ অ্যাপের মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমা ইসলাম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। জরেজুল দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারলে তাদের মধ্যে পারিবারিক মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। জরেজুলের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে তার স্বামীর বন্ধু আশরাফুলকে শামীমার মোবাইল নম্বর দিয়ে তার বন্ধু জরেজুল ইসলামকে এসব থেকে নির্বৃত্ত করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আশরাফুল নিজেই একপর্যায়ে শামীমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘নিহত আশরাফুল তার বন্ধুকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জাপান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, এর মধ্যে শামীমা ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। মূলত এই টাকার সংস্থান এবং শামীমার সঙ্গে একান্তে দেখা করার আশায় দুই বন্ধু একত্রে রংপুর থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকায় তিনজন একত্রে দেখা করার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খোঁজ করছিল। পরে তিনজনের পরিকল্পনায় তারা ডেমরা থানাধীন ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয় এবং একইদিন দুপুর আড়াইটায় বাসায় ওঠে তিনজন মিলে সেই বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। এরপর স্থানীয় বাজার থেকে তারা একটি তোশক, তিনটি বালিশ ও জানালার পর্দা কিনে।’

‘ওই বাসায় পরস্পর সম্মতিতে তারা একে অপরের সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে কিন্তু আশরাফুল শামীমার সঙ্গে অস্বাভাবিক পথে যৌনকর্ম করতে চাইলে শামীমা তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং শামীমা কান্নাকাটি শুরু করলে জরেজুল বিষয়টি নিয়ে বন্ধুর ওপর হঠাৎ ক্ষিপ্ত হন। আশরাফুল শামীমাকে জোরাজুরি করার একপর্যায়ে কৌশলে তার হাত বেঁধে অস্বাভাবিক পথে মেলামেশা করতে প্রলুব্ধ করে। আশরাফুল এরপর অস্বাভাবিক পথে যৌনকর্ম শুরু করলে ক্ষিপ্ত জরেজুল প্রথমে আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে আশরাফুল ডাক চিৎকার শুরু করলে শামীমা তার ওড়না এবং সঙ্গে থাকা স্কচটেপ দিয়ে আশরাফুল এর মুখ বেঁধে দেয়। এভাবে মুখ বাঁধা থাকায় এবং জরেজুল ইসলামের আঘাতে একপর্যায়ে আশরাফুল মারা যায়।’

‘আশরাফুল মারা গেলে দুজনে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং মরদেহ গুম করার উপায় খুঁজতে থাকে। গত ১২ নভেম্বর সারারাত তারা মরদেহের সঙ্গেই একই বাসায় অবস্থান করে এবং ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজুল ইসলাম ও শামীমা দুজনে পরিকল্পনা করে মরদেহ গুম করার জন্য বাজার থেকে দুইটি প্লাস্টিকের ড্রাম, পলিথিন ও মরদেহ কাটার জন্য দোকান থেকে একটি চাপাতি কিনে আনে। বাথরুমের পানির ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে জরেজুল ইসলাম মরেদেহটি কেটে টুকরা করে শামীমার সহায়তায় ড্রামে ভরে। শামীমা তখন বাইরে গিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে আনে এবং দুজনে সিএনজিতে করে মরদেহের ড্রামসহ বেরিয়ে পড়ে। এরপর গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে ফুটপাতে তারা মরদেহ ভর্তি ড্রাম দুইটি রেখে দ্রুত বাসায় ফিরে যায়। বাসায় ফিরে দুজনে সব মালামাল নিয়ে বের হয়ে যায়। শামীমা কুমিল্লার দিকে রওয়ানা হয় এবং জরেজ রংপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু একপর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত বদল করে কুমিল্লায় তার এক বন্ধুর বাসায় যায়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ অব্যাহত রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর