চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোনো মহলের ষড়যন্ত্রে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বৃহত্তর সুন্নি জোটের নেতারা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘী ময়দানে এক জনসভায় সুন্নি জোটের নেতারা এ কথা বলেন।
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, জুলাই সনদে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, মাজারে হামলায় জড়িতদের বিচার, জুলাই বিপ্লব ও পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করা এবং মবসন্ত্রাস থামানোসহ ১৩দফা দাবিতে জেলা সুন্নি জোট এ জনসভার আয়োজন করে।
সভায় সুন্নি জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনো অধরাই থেকে গেল। দেশে কিছুই বদলায়নি। বরং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, খুন-সন্ত্রাস আরও বেড়েছে। সরকারের কিছু উপদেষ্টার দলঘেঁষা পক্ষপাতমূলক আচরণ সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সরকার কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নে অগ্রসর না হয়ে জনপ্রত্যাশার আলোকে সকল পদক্ষেপ নেবে, এটাই দেশবাসী দেখতে চায়।’
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কবরের মরদেহও নিরাপদ নয়। কবর থেকে মরও তুলে উল্লাস করে পুড়িয়ে ফেলার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত অতীতে কখনো দেখা যায়নি।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, ‘গত ১৫ মাসে সারাদেশে মব সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষকদের হেনস্থা, মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে মসজিদে হামলা, জোর করে ইমাম-খতিবদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সরকার বারবার মব ভায়োলেন্স বরদাশত না করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে উদাসীন ছিল। এর ফলে বিচারালয়ের বিচারকও আজ নিরাপদ নয়। সুন্নি ছাত্র-জনতা কারও প্রতিপক্ষ নয়। এ দেশে সুফিবাদী জনতাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্তু গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধালে আমরা আর চুপ থাকব না।’
চট্টগ্রাম জেলা বিএসপির সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জয়নাল আবেদীন জুবাইর, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ, বিএসপির কো-চেয়ারম্যান কাজী মহসিন চৌধুরী, আহলে সুন্নাতের মজলিশে শুরা সদস্য অছিউর রহমান, সোলায়মান আনসারী, আশরাফুজ্জামান, সৈয়দ মছিহুদ্দৌলা, আবু নাছের তালুকদার বক্তব্য দেন।
জনসভা থেকে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এসব দাবির মধ্যে আছে- নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা, আরাকানে করিডর না দেওয়া, মাজার-মসজিদে হামলাকারীদের বিচার ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন সময়ে দলনিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।