ফরিদপুর: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের মানুষের মনজগতে পরিবর্র্তন ঘঠেছে। তাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা ধারণ করতে না পারলে সেই রাজনৈতিক দল বা নেতাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাই শুধু রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক করলে হবে না, অর্থনীতিকেও গণতান্ত্রিক করতে হবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি থেকে বের হতে হবে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে ফরিদপুর বিভাগের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতিতে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। জবাবদিহিতার অভাবে দেশে দুর্নীতি বাড়ে। ঘুষ না দিলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমতির জন্য সশরীরে সরকারি অফিসে যেতে হবে না। সবকিছু অনলাইনে করা যাবে। এতে করে ভোগান্তি কমে আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘মেগা প্রজেক্টের নামে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ বছরে ব্যাংকিং খ্যাত, শেয়ার বাজারসহ প্রতিটি অর্থনীতি সেক্টরে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লুটপাট করে দেশের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করা হয়েছে।’
উপস্থিত ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় সভায় প্রশ্ন উত্তর পর্বে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কল সেন্টার, ডাটা সেন্টার করতে হবে। ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকুরি করতে হবে। এরই মধ্যে দেশের অনেক যুবক তা করছে। আমাদের মতো এত যুবশক্তি পৃথিবীর কম দেশেই আছে। আমাদের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে, প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে।’ সচিবের চেয়ে মন্ত্রিদের ক্ষমতা কম থাকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে আমরা পরিবর্র্তন আনব। সচিবরা শুধু বাস্তবায়ন করবেন, পরিকল্পনা করব আমরা।’
এ সময় ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণের নানা সমস্যার কথা শুনে তা সমাধানের আশ্বাস দেন। ব্যাংক ঋণের সুদের হার আগামীতে দুই ডিজিট থেকে এক ডিজিটে আনা হবে বলে জানান তিনি। উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সম্পূর্র্ণ ফ্রি করাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ফরিদপুর বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরাম আয়োজিত সভায় বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, ফরিদপুর বাজার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন, ফরিদপুর জুট ফাইবার্স’র এমডি চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর, করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া, মামুন গ্রুপের এমডি শাহীন সাহাবুদ্দিন, রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের ইমরুল কবির, শরীয়তপুরের আলাউদ্দিন আল আজাদ, মাদারীপুরের লোকমান হোসেন মোল্লা প্রমুখ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলাদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মনিরুজ্জামান মনির, ফরিদপুর জেলা বিএনপির বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইচ্ছা, যুগ্ম আহবায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ, এ বি সিদ্দিকী মিতুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে হলরুম চত্বরে ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত ও তৈরি পণ্যের স্টল ঘুরে দেখেন অতিথিরা।