দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বয় প্রয়োজন : মায়া
১২ জুলাই ২০১৮ ২০:২০
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর কাজে সমন্বয় না থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না, বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে আয়োজিত ‘হাওড় এলাকায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, হাওড়ের মানুষ সাহায্য চায় না। তারা চায় বাঁধগুলো সুরক্ষিত থাকুক। এবং সঠিক সময়ে ধান চাষ ও ফসল ঘর তোলার ফুরসত থাকুক। কিন্তু আমরা যেসব প্রকল্প নিচ্ছি তার সবগুলো তাদের কাজে আসছে না। সরকারি অর্থ খরচ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাদের সুফল দেওয়া যাচ্ছে না। আসলে সব কাজ যদি সমন্বিতভাবে না করা যায় তবে এসব কৃষকের দুর্দশা কমবে না। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাদের এ বিষয়ে তাগিদ দেন তিনি।
দেশের হাওড় অঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চল এবং সমতলের জন্য আলাদা আলাদাভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আরও বলেন, সবার জন্য একই নিয়মে যেমন উন্নয়ন কাজ ফলপ্রসু হয় না তেমনি দেশের সব যায়গার জন্য একই নকশায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তাতে সুফলের পরিবর্তে কুফল হয়। যেটি হাওড়াঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রমাণিত।
মন্ত্রী বলেন, হাওড় এলাকায় বন্যা ঝুঁকি মোকাবিলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নিয়মিত মেরামত ও সংস্কার, নিয়মিত নদী খননের মাধ্যমে ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা, কার্যকর আন্তঃনদী সংযোগ স্থাপন করা ও বর্তমান আন্তঃনদী সংযোগের উন্নয়ন করা, হাওর অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা, বন্যার পূর্বাভাস দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া, আগামজাত ও বন্যা সহিষ্ণু জাতের ধান আবাদে কৃষককে উৎসাহিত করা, বাঁধ ব্যবস্থাপনা ও নির্মাণে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, গবাদি পশুর জন্য দানাদার খাদ্য সরবরাহ, নিচু বিল ধানচাষের পরিবর্তে মাছ চাষে ব্যবহার করা, নিন্মাঞ্চলের মানুষের ঘরের ভিটা উঁচু করে দেওয়া এবং এই অঞ্চলে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরির মাধ্যমে হাওড়ের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপকে আমি সময় উপযোগি সিদ্ধান্ত বলে মনে করি।
কর্মশালায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, অতীতে উন্নয়ন কাজের প্রকল্প ডিজাইন হতো কেন্দ্র থেকে। এতে দেশের সর্বনাশ হয়েছে। আমাদের দেশের নদীগুলো শেষ হয়ে গেছে। অপ্রয়োজনীয় বাঁধে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে বছরের পর বছর। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখা দরকার ভারতের চারটি রাজ্যের ২৮টি নদীর পানি ও পাহাড়ি ঢল এই হাওড় দিয়ে বের হয়।
তিনি বলেন, হাওড়বাসীর দুর্ভোগের কারণ অপরিকল্পিত বাঁধ ও সড়ক ব্যবস্থা। বর্তমানে হবিগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা থেকে সুনামগঞ্জ পূর্ব-পশ্চিমমুখী দুটি সড়ক তৈরি হচ্ছে। এটা হলে হাওড় শেষ হয়ে যাবে। কারণ আমাদের দেশের পানির প্রবাহ সাধারণত উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী।
অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, দেশের সাতটি জেলার প্রতিটি হাওড়েরই চরিত্র আলাদা আলাদা। প্রতিটি নদীর চরিত্রও তাই। এ জন্য প্রতিটি হাওড় ও নদীকে আলাদাভাবে না চিনলে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা কঠিন। নদী বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনিদিৃষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর গাফিলতির কারণে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
সারাবাংলা/এমএস/এমআই