Monday 17 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানবতাবিরোধী অপরাধ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় আজ, যে সাজা হতে পারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০০

শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর)। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করবেন। রায়ে কী সাজা আসতে পারে শেখ হাসিনার- মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা নারী হওয়ার কারণে কম সাজা হতে পারে? কী আছে আইনে?

এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

জানা গেছে, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য বাংলাদেশে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল আইনানুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধানও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এই আইনে একটি সংশোধনী এনে আসামির সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিতে পারবে। একইসঙ্গে, ওই সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত বা ভুক্তভোগী বা তার পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে রায়ের যে অংশটুকু ট্রাইব্যুনাল পড়ে শোনাবেন সে অংশটুকু ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সম্প্রচার করবে। বিটিভির মাধ্যমে অন্য গণমাধ্যমও সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে বলে জানা গেছে।

সাজার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম বলেন, ‘আসামির অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা অপরাধের গভীরতা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল যেকোনো শাস্তি দিতে পারবেন। মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা আমৃত্যু কারাদণ্ড দিতে পারেন। এর চেয়ে কম বিভিন্ন মেয়াদের সাজাও দিতে পারে ট্রাইব্যুনাল।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে ফাঁসির সাজা হলেও কোনো নারীর এখনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। তাই নারী হিসেবে রায়ে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, ‘জামিনের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ ব্যক্তি ও কিশোরদের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তবে রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা নেই। আসামি নারী কি পুরুষ তা বিবেচ্য নয়। বরং, তিনি কী অপরাধ করেছেন, এর ভিত্তিতেই শাস্তি নির্ধারণ হবে।’

অপরদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। হাইকোর্ট মাজার গেইটসংলগ্ন ট্রাইব্যুনালের ফটকে সেনাবাহিনী বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এছাড়া, আইনজীবী, সাংবাদিক ও ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশ করতে হচ্ছে পরিচয়পত্র দেখিয়ে।

এই মামলায় আনা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো-

  • প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচণা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
  • দ্বিতীয় অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এই নির্দেশ চলে যায়। সেই নির্দেশের আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
  • তৃতীয় অভিযোগ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
  • চতুর্থ অভিযোগ, রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওই দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
  • পঞ্চম অভিযোগ, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার রায় আগামী ১৭ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে জানায় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

আর এই রায়কে ঘিরে গত ৭ নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসছে দুর্বৃত্তরা। তবে পুলিশ বলছে, সব বিষয়কে মাথায় রেখেই নিরাপত্তার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

সারাবাংলা/এমএইচ/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর