Monday 17 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বগুড়ায় প্রায় ২০০ বছরের পুরনো নবান্ন উৎসবে মেতেছে গ্রামবাসী

স্পেশাল করেসপডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৩১ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৫

নবান্ন উৎসবের মেলা। ছবি: সারাবাংলা

বগুড়া: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শালফা গ্রামে প্রায় দুইশত বছরের নবান্ন উৎসবে মেতেছে গ্রামবাসী। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে নতুন ধানের চাল থেকে বিভিন্ন পিঠা-পুলি তৈরী, নতুন ধানের ভাত, ১২টি গরু এবং ১৪টি মহিষের মাংস দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের ধুম পড়েছে। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে এলাকায় বসেছে বিশাল মেলা।

এলাকার প্রবীণ বক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঠিক কবে কখন থেকে জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের শালফা গ্রামে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে তার সঠিক ইতিহাস জানা নেই। তবে বংশ পরম্পরায় নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে ২০০ বছর ধরে। একেবারে গ্রামীণ পরিবেশের প্রায় ৭ হাজার কৃষক পরিবারগুলো আমন ধান কাটা এবং মারাই করে নবান্ন উৎসবে মেতে উঠেন। নতুন ধানের চাল থেকে উৎসবের শুরু হয়ে থাকে। নতুন ধান চালের পিঠা-পুলি, পায়েশ আর নানা পদের মিষ্টান্ন খাবার তৈরী হয় ঘরে ঘরে।

বিজ্ঞাপন

এই নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কয়েক দিন আগে থেকে এলাকায় মেয়ে ও মেয়ে জামাই, আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসেন। এই গ্রামের সব বাড়িই আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। ধুম পড়ে যায় পাড়ায় পাড়ায়, বসে মিলনমেলা।
এই উৎসব শালগ্রাম থেকে ছড়িয়ে গেছে উপজেলার পালোয়ান পাড়া, কমারপুর, কালাইকুরি, সাগরপুর, ছোট আখিড়া, বড় আখিরা, নিমাইদীঘিসহ আশপাশের আরো কয়েকটি গ্রামে। মানুষ ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে একাকার হয়ে গেছে নবান্নের উৎসবে। প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে আনন্দ-উল্লাসে ভরা এই নবান্ন উৎসবে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে এই উৎসব। নতুন ধানের আমেজ নিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে নাড়ু, পুলি, পিঠা আর নানা ধরনের দেশীয় খাবার। প্রতিটি বাড়িতে ঢেঁকিতে চাল ভাঙানো হয় কয়েকদিন আগে থেকে। গ্রামজুড়ে যেন এখন উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়েছে। সকাল থেকেই গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরী হচ্ছে ভাপা পিঠা কেউ বা অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত।

গ্রামের নবান্ন উৎসবের প্রথা অনুযায়ী এবারো গ্রামে ১৪টি মহিষ ও ১২টি গরু জবাই করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়নের জন্য। এই মহিষ ও গরুগুলো গ্রামবাসী সবাই মিলে টাকা দিয়ে কিনে থাকেন। পরে সেগুলো জবাই করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে রান্না করেন। মুলত মহিষের মাংস দিয়ে স্বজনদের নানা পদের খাবার তৈরী করে আপ্যায়ন করানো হয়। মহিষগুলো আগের দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরিয়ে নিয়ে গ্রামবাসীকে জানান দেওয়া হয়। প্রায় ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে এই গ্রামে নবান্ন উৎসব পালন করে স্থানীয়রা।
ইদানিং মাছ কিনতে দেখা যায় কিছু পরিবারকে। উৎসবকে ঘিরে এলাকায় বিশাল মেলা বসে। নানা পণ্য দিয়ে সেজে উঠা মেলায় শিশুদের পাশাপাশি মেয়ের জামাইরাও ভিড় করে। এবারের গ্রামজুড়ে মেলায় বসেছে নাগরদোলা, বেলুন, ঘোড়ার গাড়ি, চুরি, কসমেটিক্স, হরেক রকমের মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারের দোকান। এছাড়া পাড়ায় পাড়ায় চলছে মোরগ লড়াই প্রতিযোগিতা, রশি টানাটানিসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলা।

গ্রামবাসীরা জানান, এ নবান্ন উৎসবের আনন্দ কখনো কখনো ঈদের আনন্দকেও ছাপিয়ে যায়। এটি শুধু একটি উৎসব নয়, এটি নতুন ফসল, পরিবার-পরিজনের মিলন, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করে। গ্রামবাসীও সকলেই একত্র থেকে উৎসবে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।

৭২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আফজাল হোসেন জানান, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তার দাদী-দাদাকে দেখেছেন নতুন ধানের চাল থেকে পিঠা তৈরী করতে আর এলাকায় মহিষের প্রচলন আগে থেকে থাকায় মহিষের মাংস রান্না করতে। সেদিন বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ছাড়াও আশপাশের লোকজনও খেতে আসতো। এখন এই পরিসর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলা শালফা গ্রামের বাসিন্দা ও আদমদীঘি রহিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শেফাউর রহমান তালুকদার জানান, ইতিহাস বলছে, প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই গ্রামে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন মেয়ে জামাই সহ সব আত্মীয়-স্বজন আসে। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মেলা বিভিন্ন খেলাধুলা। এই উৎসবকে ঘিরে আশেপাশে বসেছে হরেক রকমের দোকান। সব মিলিয়ে এক উৎসবে মিলিত হয় গ্রামবাসী। মূলত এটি একদিনের উৎসব হলেও এর আমেজ থেকে যায় প্রায় তিন দিন।

সারাবাংলা/আরটি/জিজি
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর