ঢাকা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আরেকটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া, রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ায় হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু হয়। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-১ তথা উসকানি, মারণাস্ত্র, ড্রোন, হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশসহ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দায়ে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চানখারপুলে ছয় হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর দায়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-২ এ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
এছাড়া, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-২ বা চানখারপুলে ছয় হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর দায়ে আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়ায় মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনিও একই অপরাধে অপরাধী। তবে স্বেচ্ছায় ও সত্য বলায় তার প্রতি নমনী হন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় হাসিনা-কামাল পলাতক থাকলেও গ্রেফতার রয়েছেন মামুন।
সাজা পাওয়া আসামিদের মধ্যে মামলায় পলাতক রয়েছেন- শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন সাবেক আইজিপি মামুন। যদিও রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি।
এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন।
এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।