ঢাকা: শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশের রায় স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
একই সঙ্গে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কাল বিলম্ব না করে আইনের কাছে সোপর্দ করার জন্য প্রতিবেশি দেশের প্রতি আহবান জানিয়েছে দলটি।
শেখ হাসিনার রায় ঘোষণা শেষে সোমবার (১৭ নভেম্বর) মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিক্রিয়া ও আহবান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আজকে বাংলাদেশের রাজনীতি, আইনের শাসন এবং বিচারের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কোনো একজন সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ সাজা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের মধ্যে দিয়ে জাতির আশা-আকাঙ্খা কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকরা যে রায় পড়েছেন, সেখানে ফুটে উঠেছে অপরাধীরা কী পরিমাণ নিষ্ঠুর, ঘৃন্য প্রতিহিংসামূলক অপরাধ করেছে। পত্র-পত্রিকা, অডিও-ভিডিও তাদের টেলিফোনিক কনভার্সেশনের যেসব তথ্য ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে, রায়ের মধ্যে কোড, আনকোড সেগুলো পড়ে শোনানো হয়েছে। আমরা বিস্মিত হয়েছি, জাতি বিস্মিত হয়েছে। ফলে আমরা মনে করি এই বিচারের ব্যাপারে কারও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এই বিচার স্বচ্ছ হয়েছে নিরপেক্ষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বলবো যাদের হত্যা করা হয়েছে। আয়না ঘরে, খুন খারাবি করে, ক্রস ফায়ারে বিভিন্নভাবে হত্যা করা হয়েছে। পিলখানা, শাপলা চত্বর আরও বিচার প্রক্রিয়া সামনে আছে। এটা প্রথম রায় আমরা পেলাম। আজকের রায়ের মধ্যে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো- যারা তাদের পিতা হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ কোনোদিন হবে না। কিন্তু কিছুটা স্বস্তি তাদের হৃদয়ে এসেছে। একটা সুবিচার তারা দেখতে পেলো। রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান কোনো কর্তাব্যক্তি, রাজনৈতিক কোনো বড় নেতা, যতই ক্ষমতাবান হোক তারা যে আইন ও বিচারের উর্ধে নয়- এ রায়ের মধ্যে দিয়ে সেটি প্রতিষ্ঠিত হলো।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, বিচারকে ঘিরে সারাদেশের যে নাশকতা, ককটেল নিক্ষেপ গাড়ি পোড়ানো অবরোধ সুষ্টি করার যে পায়তারা করা হয়েছে, জাতি তা প্রত্যাখান করেছে। যাদের রায় হলো তারা এখন পলাতক। এই পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে যারা আশ্রয় দিয়েছে, এটা আন্তর্জাতিক সকল আইন পরিপন্থী। আমরা দাবি করবো তাদের অবশ্যই বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশের আইনের কাছে তাদেরকে সোপর্দ করতে হবে। গণতন্ত্রের দাবি করলে, সৎ প্রতিবেশিমূলক আচরণ দাবি করলে, সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্কের দাবিদার প্রতিবেশি হলে এটি তার প্রথম দায়িত্ব, একজন পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কাল বিলম্ব না করে আইনের কাছে সোপর্দ করা।
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে এই ইস্যুতে সম্পর্ক কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছু বদলানো যায়, প্রতিবেশি বদলানো যায় না। বিশাল রাষ্ট্রের জনগণের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। শাসন ক্ষমতায় যারা আসেন, তারা যে আমাদের সাথে আচরণ করেন- বর্ডার কিলিং, পানি সমস্যা, ট্রানজিট করিডোর আর বড় বড় ঘৃন্য অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়ার মতো কাজ -কোনো প্রতিবেশির কাজ নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিম মাছুম, মাওলানা আবদুল হালিম, হামিদুর রহমান আযাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, মোবারোক হোসাইন প্রমুখ।