চট্টগ্রাম ব্যুরো: চব্বিশের অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর চট্টগ্রাম জুড়ে মিছিল, মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাসে মেতেছে ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা বলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর একবার মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আরেকবার মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে, এটাই ইতিহাস।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে বিপ্লব উদ্যানে জড়ো হন অসংখ্য তরুণ-যুবক। ‘ছাত্র-জনতা, চট্টগ্রাম’ ব্যানারে জড়ো হওয়া তরুণ-যুবকেরা এ সময় পরস্পরকে মিষ্টি খাইয়ে উল্লাস করেন। এরপর সেখানে পথচারী, রিকশাচালক, পরিবহণ শ্রমিকসহ আরও লোকজনের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন।

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর চট্টগ্রামে আনন্দ-উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ। ছবি: সারাবাংলা
পরে তারা দুই নম্বর গেইটে সড়কে শোকারানা নামাজ আদায় করে আনন্দ মিছিল বের করেন। মিছিলে নেতৃত্ব এক সংগঠক সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর সারাদেশে মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল। আজ শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আবার সারাদেশে মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে। এটাই ছাত্র-জনতার ইতিহাস। আজ আমাদের অনেক খুশি লাগছে। আমাদের যেসব ভাইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন, তাদের আত্মা আজ শান্তি পাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে দেশে ফেরত এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানাই।’

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল। ছবি: সারাবাংলা
এদিকে রায়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল বের হয়। এতে কয়েক’শ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
সারাবাংলা’র চবি করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিল ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, কাটাপাহাড় সড়ক হয়ে জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, খুনি হাসিনার ফাঁসি হলো, রশি লাগলে রশি নে, স্বৈরাচারের ফাঁসি দে, আবু সাঈদ- মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’- এসব স্লোগান দেন।
মিছিল শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহসান হাবিব বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাগ্যকাশে এক ফ্যাসিস্টের আবির্ভাব হয়েছিল, আজ সেই ফ্যাসিস্টের ফাঁসির রায় হয়েছে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে নিয়ে এসে অতি দ্রুত এই রায় বাস্তবায়ন করা হোক। এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ এখন আর গুম, খুনের রাজনীতি পছন্দ করে না। ভবিষ্যতে যারা গুম,খুনের রাজনীতি করবে তাদের পরিণতিও এরকম হবে।’

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর চট্টগ্রামে শোকরানা নামাজ। ছবি: সারাবাংলা
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের দফতর সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ বলেন, ‘আজ শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এ রায় বাস্তবায়ন করা হোক। বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা ও বিভাগে হাজার হাজার হাসিনা রয়েছে। তাদেরও বিচার করা হোক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও হাসিনার প্রেতাত্মারা আছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। আজকের এই রায় পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। এটি প্রমাণ করে জালিম যত জুলুম করুক না কেন, তার পরিণতি হয়।’