নোয়াখালী: জেলার পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম নোয়াখালী সরকারি কলেজ। ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষী এ প্রতিষ্ঠান দুটি ক্যাম্পাসে বিভক্ত—একটিতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী, অন্যটিতে ডিগ্রি, ১৭ বিষয় নিয়ে অনার্স এবং ১৫ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সের ক্লাস চলে। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর এই শিক্ষাঙ্গনে এখন বড় হুমকি ভবনগুলোর জীর্ণদশা। নতুন ক্যাম্পাসের ৮টি ভবনের মধ্যে ৬টিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ভেঙে পড়া ভীম, খসে পড়া ছাদের পলেস্তরা, দেবে যাওয়া দেয়াল, ভাঙা জানালার কাচ, শেওলায় ঢেকে থাকা পরিত্যক্ত কক্ষ। বিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগের প্রায় সব কক্ষেই রড পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে। কোথাও কোথাও জোড়াতালি দিয়ে সেই রড ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে কক্ষজুড়ে জমে থাকে পানি; পচে ওঠা দেয়াল থেকে খসে পড়ে প্লাস্টার।

নোয়াখালী সরকারী কলেজে ৬টি ভবনের ভেঙে পড়া ভীম, খসে পড়া ছাদের পলেস্তরা। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা
শিক্ষার্থীরা বলছে, ক্লাস চলাকালীন একাধিকবার ভীমের অংশ খসে পড়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন শিক্ষকরা। শৌচাগারগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী। গত পাঁচ বছর ধরে চলছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেই শিক্ষা কার্যক্রম।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে একাদশ শ্রেণির মাধ্যমে শুরু হওয়া কলেজটি ১৯৬৮ সালে জাতীয়করণ হয়। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ছয়টি ভবন আজ ৩৫ বছর বা তিন দশক পেরিয়ে গেলেও হয়নি কোনো সংস্কার। সাম্প্রতিক বছরেও নির্মাণ হওয়া দুই ভবন ছাড়া বাকিগুলো নড়বড়ে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রশাসন বলছে, ভবন উন্নয়ন ও ক্যাম্পাস আধুনিকায়ন নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সঙ্গে চিঠি চালাচালি হয়েছে, তবে কাজ শুরু হতে সময় লাগবে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘আমাদের ভবনগুলো বর্ষায় সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ক্লাসের মধ্যে পানি পড়ে, প্লাস্টার খসে পড়ে। কখন কোন ভীম ভেঙে পড়বে বুঝতে পারি না। জীবনের ঝুঁকি জেনেও ক্লাস করছি।’
তাদের অভিযোগ, ভবনগুলোর অবস্থা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একই রকম। তবুও মিলছে না স্থায়ী সমাধান।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ভবন নির্মাণ’সহ ক্যাম্পাসকে আধুনিকায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
নোয়াখালী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘অনার্স ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মাণ ও আধুনিকায়নের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোয়াখালী সরকারি কলেজ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। লক্ষ্মীপুর ও ফেনী থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। ভবন সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে তারা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে। তাছাড়া, দ্রুত সংস্কার না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।