Wednesday 19 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:১৫ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১৬

নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলন।

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। নদীর ধার কেটে বালু তোলায় নষ্ট হচ্ছে নদীর নাব্যতা, ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষকদের আবাদি জমি। পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটিও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

যেখানে জেলা প্রশাসক বলছেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেখানে প্রায় ৫ মাস ধরেই ড্রেজার দিয়েই চলছে বালু তোলা।

পীরগঞ্জ উপজেলার কোষা মৌজায় এ চিত্র চোখে পড়ে। সরকারি বিধি অনুযায়ী কোষা বালু মহালটির ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে—৭৪৬ ও ৭৪৯ নম্বর দাগ থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই ব্রিজের পাশের ৭৪১ নম্বর দাগে ড্রেজার ও স্ক্যাভেটার বসিয়ে লাখ লাখ টাকার অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

এমন অভিযোগ তুলে ব্রিজটি রক্ষার দাবিতে পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ২ নম্বর কোষারাণীগঞ্জ ও ৫ নম্বর সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলন।

জানা যায়, ১ বছর মেয়াদে ১০ দশমিক ৮১ একর জমির বালু উত্তোলনের জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক নওগাঁ জেলার শিমলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলামকে ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু বালু ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে নির্দিষ্ট চৌহদ্দি নির্ণয় না করেই নিজের ইচ্ছেমতো বালু তুলছেন। এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন ভাড়া করে প্রতিনিয়ত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদী নষ্ট করা, পরিবেশ বিপন্ন করাসহ জীববৈচিত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। দুটি ইউনিয়নের ১০ সহস্রাধিক মানুষের একমাত্র যাতায়াতের পথ ওই ব্রিজ। অথচ ব্রিজের ঠিক পাশেই ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ইজারাদারদের পাশাপাশি কিছু স্থানীয় লোকজনও নদীর দুই ধারে মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছে। প্রশ্ন করলে তারা দাবি করছেন—‘এটা আমাদের জমি, আমরা বালু কাটছি—সমস্যা কোথায়?’

এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় মোশারফ, সাইফুল, দুলাল, সালাউদ্দিন, আলাউদ্দিন, বাবুল, মকবুল মেম্বার, হান্নান সহ কয়েকজন মিলে এ কাজ করছে। নির্ধারিত ৭৪৬ ও ৭৪৯ নম্বর দাগ ব্রিজ থেকে অনেক দূরে হওয়া সত্ত্বেও সেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে না। বরং ব্রিজের ঠিক পাশেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে, যা ব্রিজের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ ছাড়া কিছু স্থানীয় মোহল ইজারা ছাড়াই বালু তুলছে, যার কোনো আইনগত বৈধতা নেই। এতে একদিকে নদীর পাড়ের সোনালি ফসলি জমি ধসে যাচ্ছে, অন্যদিকে এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটিও ঝুঁকিতে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ‘বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান থেকে বৈধভাবে বালু তুললে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ব্রিজ ও জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে যে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সঠিক জায়গায় বালু উত্তোলন করছেন কিনা‌ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ কাজটিতে আমার প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে। যে জায়গায় বালু উত্তোলন করার কথা সে জায়গা থেকেই বালু তোলা হচ্ছে।’

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন নিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কি জানেন না বালু কি দিয়ে তুলে? বালু কি হাত দিয়ে তুলব। অনুমতি নিয়েই ড্রেজার মেশিন বসিয়েছি।’

অন্যদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি এটার সঙ্গে সেইভাবে সম্পৃক্ত না। তবে ড্রেজার মেশিনটি আমার এবং যে জায়গায় বালু রাখে সেটাও আমার।’

এ বিষয়ে কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা কামিনী রায় বলেন, ‘আমি কিছু জানি না, আপনারা বারবার আমার কাছে আসতেছেন কেন? আপনারা অ্যাসিল্যান্ডের কাছে যান। ডিসি স্যার মিডিয়ার সামনে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।’

একই বক্তব্য দেন পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার এন এম ইশফাকুল কবীর। তিনি বলেন, ‘ভিডিও বক্তব্য দিতে পারব না, জেলা থেকে সীমাবদ্ধতা আছে।’ তবে মৌখিকভাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আরও অভিযোগ পেয়েছি।’ অন্য জায়গায় বালু উত্তোলন করে থাকলে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর