চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় শীতজনিত কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ১৮ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ৫৭২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ড ও বহির্বিভাগে প্রতিনিয়ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর চাপ বাড়ছে। সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ দিনে (১ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত) হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৫৭২ জন রোগী। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩৭৭ জন, যাদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ১৯৫ জন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রোগী।
গত ১৮ দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আঁইলহাস গ্রামের শাহানাজ (২ দিন বয়স) গত ৩ নভেম্বর রাতে ভর্তি হয়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। একই উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের সালমা (১ দিন বয়স) ৯ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং পরদিন দুপুরে মারা যায়।
হাসপাতালে আসা জেলা সদরের বেলগাছী গ্রামের জহুরুল জানান, তার ছেলে হঠাৎ সর্দি-জ্বর হয়, পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। চিকিৎসা নেওয়ার পর ছেলে সুস্থ আছে।
শিশু সন্তানের চিকিৎসা নিতে এসে রাবেয়া বলেন, ‘গত তিন দিন যাবৎ তার ৪ বছর বয়সী সন্তানের পেটে ব্যথা শুরু হয়। এরপর থেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসা নিয়ে এখন ভালো।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা।
রফিক নামের আরেকজন জানান, তার মেয়ের ঠান্ডা লেগে কাশি-শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে জানা যায়, মেয়ের নিউমোনিয়া হয়েছে। এখন অক্সিজেন চলছে, সে কারণে কিছুটা ভালো।
চিকিৎসকেরা বলছেন, রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ কয়েকগুণ বেড়েছে, পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ছোট শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। আতঙ্কের কিছু নেই; তবে পরিবারের সচেতনতা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, দিনের গরম ও রাতের ঠান্ডার তীব্র ব্যবধানে ছোট শিশুদের শ্বাসযন্ত্র দ্রুত জটিল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগেও শত শত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা, কাশি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, ‘সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। এ কারণে অনেক শিশু ঠান্ডায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় বাবা-মায়ের সচেতনতাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ার শিশুসহ বয়স্ক রোগী বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া আউটডোরে দুই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিলে গড়ে ৩০০-৪০০ রোগী দেখছি।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া খুব দ্রুত ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তাই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, গরম কাপড় পরানো এবং সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই হাসপাতালে আনতে হবে।’