Wednesday 19 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন পাবলিক অফার রুলস আইপিওবান্ধব নয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:২৩

-ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব পুঁজিবাজার বান্ধব নয়। নতুন এই রুলস ভাল ও গুনগতমানসম্মত কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ হারাবে। বহুজাতিক, নামীদামী কোম্পানিগুলো কঠিন শর্ত মেনে তালিকাভুক্ত হতে চাইবে না। ফলে পুঁজিবাজার আরও সংকটে পড়বে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ শীর্ষক স্টেকহোল্ডার বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা স্টক একচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক সমস্যা আছে, যে কারণে ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। এ সমস্যাগুলো দূর করতে রুলস হওয়ার আগেই সমাধান খুঁজতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মার্কেটের পরিধি বাড়াতে ভালো ও নতুন নতুন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে। আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের সমস্যাকালীন দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যেতে দেখা যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের হাতেও রুলসের জন্য অনেক সময় কিছু করার থাকে না। তাই দরজা-জানালা যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য রুলস করার আগেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা উচিত।

মমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানোতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এই জায়গায় কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার মতো করেই রুলস তৈরি করতে হবে।

ডিএসই’র পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আইন করে ব্যবসা হবে না। এতো বেশি আইন বিএসইসি’র ওয়েবপেইজে আইন রয়েছে। কোথাও না কোথাও বাধা আছে। প্রকৃতপক্ষে মাইন্ড সেট আপ চেঞ্জ করতে হবে। আমরা এখানে ফ্যাসিলেটেড করতে এসেছি। এখানে রেগুলেটর বাদ দিয়ে বলতে হবে ফ্যাসিলিটেশান।

তিনি বলেন, গত এক বছরে একটি আইপিও আসেনি। আমাদের বাংলাদেশের কনটেস্টে চিন্তা করতে হবে। বাইরের কনটেস্টে আমাদের চললে হবে না। যেখানে ডলারের রেট এতো ওঠানামা করে। সেখানে রেট বেঁধে দেওয়া ঠিক না। কারণ আগামীতে বেঁধে দেওয়া টাকা তো থাকবে না। সেই কারণে জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া পাঁচ ব্যাংকের একীভূত করার কারনে শেয়ারহোল্ডাররা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়ে আমাদের চেষ্টা চলছে।

ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মতে নতুন আইপিও রুলসে ভাল কোম্পানির তালিকাভুক্তির সুযোগ কমে যাবে। বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অন্য দেশের তুলনায় পুঁজিবাজারে চেয়ে আরও পিছিয়ে পড়বে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে আগে ভিয়েতনামের তুলনা হতো। এখন বাংলাদেশ ভিয়েতনামের চেয়ে ১৫ বছর পিছিয়ে পড়েছে। নতুন এই রুলসের ফলে আরও ১৫ বছর পিছিয়ে পড়বে।

বিএসইসি’র উপ-পরিচালক লুৎফল কবির বলেন, বিগত বছরগুলোতে আইপিওতে অনিয়মের কারণে নতুন রুলস প্রণয়ন করা হবে। এটিই চূড়ান্ত নয়। অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে এটির সংশোধনী আনা সম্ভব।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)-এর প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন বলেন, নতুন রুলসের মাধ্যমে একটি গতিশীল সেকেন্ডারি মার্কেট আশা কঠিন। কারণ ভাল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে না।

ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, পুঁজিবাজারে আইপিও অনুমোদনে প্রধান বাঁধা দীর্ঘকালক্ষেপন। বর্তমানে একটি আইপিও অনুমোদন পেতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যায়। যেখানে কোনো কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ বা ঋণ সহজেই ব্যাংক থেকে পেতে পারে। বিশেষ করে ভাল ভাল কোম্পানি যখন ব্যাংকে ঋণ নিতে যায়, তারা ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে চাহিদামতো ঋণ পেয়ে যায়। এমনকি ৩য় পক্ষের মাধ্যমেও সেটি পাচ্ছে। এছাড়া গত দুই বছরে পুঁজিবাজারে কোন আইপিও নাই। ভাল আইপিও না আসার কারণে পুঁজিবাজার নেতিবাচক প্রবণতা থেকে বের হতে পারছে না।

সিএমজেএফ সভাপতি বলেন, ব্যাংক ঋণ সহজে প্রাপ্তি ও যেসব কোম্পানির ঋণ দরকার নেই- সেগুলো বাজারে আসতে চায় না। এ কারণে ভাল কোম্পানিকে আ্গ্রহী করতে হলে আইপিও অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনতে হবে। কোন কোম্পানি আইপিও আবেদন করার পর যদি অনুমোদনসহ সব কার্যক্রম ছয়মাসের সম্পন্ন করা যায়, তবে ভাল কোম্পানিকে বাজারে আনা সম্ভব। কারণ কোন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে নানা আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে চলে আসে। তাদের অনেক কিছুই মেনে চলতে হয়। সেই কারণে কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে হলে আইন শিথিল হলেও করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই বিষয়গুলোতে নজর দিতে পারে। এছাড়া পুঁজিবাজারের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, নতুন কমিশন গঠনের পর থেকে নানান ধরনের গুজবে পড়েছে মার্কেট। আর বড় বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই)-এর প্রতিনিধি বলেন, নতুন রুলস ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাধার সন্মুখীন হবে। কারণ ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার অনেক মেশিনের তথ্য রেকর্ডে থাকে না। ফলে সম্পদ মূল্যায়নে জটিলতা বাড়বে। আবার ২০১২ সালের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট আইনের আগে নগদ টাকাতেও শেয়ার ই্স্যু করা হয়েছে। এটি নতুন জটিলতা তৈরি করবে।

বক্তারা বলেন, কোন একটি কোম্পানির তালিকাভুক্তির পর সব দায় ইস্যুয়ার কোম্পানির ওপর দেওয়া হয়েছে। এতে আগ্রহ হারাবে নতুন ইস্যু ম্যানেজার। ইস্যুয়ার ও ইস্যু ম্যানেজাররা আগ্রহ হারাবে। একইসাথে আইপিও’র টাকায় ঋণ পরিশোধের ওপর কঠোরতাও কাম্য নয়।

বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৬ মৃত্যু
১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:২৪

আরো

সম্পর্কিত খবর