ঢাকা: চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক খাতের সার্বিক পর্যালোচনায় নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি)-এর পর্যালোচনা সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ওই সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমান নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। পাশাপাশি এসডিএফ হার ৮ শতাংশ এবং এসএলএফ হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থাকবে।
এছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা এবং মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে প্রকৃত নীতিগত সুদহার ৩ শতাংশে পৌঁছানো পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত: কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার (রেপো রেট)।
সভায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জসমূহ ও পূর্বাভাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বিশেষত: দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাজারের সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রা ও মুদ্রানীতির প্রভাব, মূল্যস্ফীতির বর্তমান অবস্থা, আসন্ন রমজান ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতের মুদ্রা ও তারল্য পরিস্থিতি, নীতি সুদহারের অবস্থা, বহিঃস্থ খাত থেকে সৃষ্ট চাপ এবং বিনিময় হার পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
সভায় মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমে আসা এবং সেপ্টেম্বর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে নেমে আসায় ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রমজানে ভোক্তা চাহিদা বেড়ে সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে আবহাওয়াজনিত কারণে আমন ধানের ক্ষতি এবং কিছু অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে পণ্যমূল্য কিছুটা বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার প্রভাবেও মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।
সভায় বলা হয়, আন্তঃব্যাংক কলমানি ও রেপো রেট সামান্য হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া, সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে সুদের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে, যা আর্থিক খাতে স্বস্তি এনেছে। তবে, বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির গতি এখনও ধীর। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যান্যের মধ্যে বৈদেশিক খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি মাঝারি হলেও আমদানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। রমজান উপলক্ষে জরুরি পণ্যের এলসি মার্জিন শিথিল করার কারণে আমদানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক বলে কমিটি মনে করে। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহও গতিশীল ছিল।