Thursday 20 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্কুলে যাতায়াতের পথ বন্ধ, প্রতিবাদে গাছতলায় পাঠদান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০০

পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছতলায় চলছে পাঠদান, ইনসেটে রাস্তা দখল করে তৈরি ঘর। ছবি: সারাবাংলা

কুড়িগ্রাম: চিলমারী উপজেলার পূর্ব চর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটিতে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে বন্দোবস্ত পাওয়া সরকারি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের কারণে। পাঁচ বছর ধরে চলা এ ভোগান্তির কোনো সমাধান না হচ্ছে। তাই শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানাতে সড়কের ধারে গাছতলায় পাঠদান শুরু করেছেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে বর্তমানে ছয়জন শিক্ষক এবং ১০৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওয়াবদা খালের বাঁধ ছিল বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র পথ। দীর্ঘদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা এই পথ দিয়েই যাতায়াত করত।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ক্লাস চলছে। যে পথ দিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেত, সেখানে এখন বসতি স্থাপন করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক শাহ্ আলম বলেন, ‘১৯৮৮ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে আমরা চারজন শিক্ষক পাঠদান শুরু করি। পরে বিদ্যালয়টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চালু থাকে এবং ২০১৩ সালে সরকারিকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্কুলে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল ওয়াবদা খালের বাঁধ, যা এখন পুরোপুরি বন্ধ।’

জানা যায়, সাবেক ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলী বিদ্যালয়ের জন্য ৩৫ শতাংশ জমি দান করেছিলেন। স্কুলে যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল ৩১৩৫ ও ৩১৩৬ দাগের ওপর দিয়ে যাওয়া বাঁধ। এর মধ্যে ৩১৩৬ দাগ ছিল সরকারি খাসজমি। ২০১৬ সালে অষ্টমীর চরের জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে ৩১৩৬ দাগে ১৫ শতাংশ এবং ৩১৩৭ দাগে ২১ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার শ্যালক কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ইউএনও মো. মাইদুল ইসলামের প্রভাব খাটিয়ে বন্দোবস্তকৃত জমির বাইরে আরও উত্তরের ৩১৩৫ দাগও দখলে নেন এবং সেখানে বসতি গড়ে তোলেন। ফলে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন ও সুম্মা খাতুন বলেন, ‘রাস্তা না থাকায় পাশের দু’টি বাড়ির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বাড়ির পাশে বড় গর্ত, বর্ষায় পানি ভরে যায়। ছোটরা ভয় পেয়ে অনেক সময় স্কুলেই আসতে পারে না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রিয়াদ বিন রানু বলেন, ‘স্বাভাবিক যাতায়াতপথ না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় পাঠদান করছি।’

এদিকে জায়গা দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা রাস্তা বন্ধ করিনি। রাস্তার জন্য বরাদ্দ এলে প্রয়োজনীয় জায়গা ছেড়ে দেব।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মনসুর আলী বলেন, ‘সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পথ বন্ধ করা চরম ধৃষ্টতা। রাস্তার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আমিও হিংসার শিকার হয়েছি।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘স্কুলের রাস্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে। সরেজমিন প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, খুব শিগগিরই স্কুলের জন্য বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর