শহীদ মীর নিসার আলি তিতুমীরের ১৯৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জুলাই ২৪-কে প্রেক্ষিত ধরে শহীদ তিতুমীরের সংগ্রাম স্মরণে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি।
১৯ নভেম্বর (বুধবার) সকাল ১০টায় তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সোসাইটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউনাইটেড নেশনস-এর আবুল কাশেম শেখ। মুখ্য আলোচক ছিলেন তিতুমীর কলেজ ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. টি. এম. যায়েদ হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এম. এম. আতিকুজ্জামান। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. এস. এম. খালিদুজ্জামান এবং সতিকসাসের শিক্ষক উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস মল্লিক।
এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন সতিকসাসের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও এশিয়ান টেলিভিশনের প্ল্যানিং এডিটর রফিকুল ইসলাম রলি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার মানিক মুনতাসির এবং লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম।
মুখ্য আলোচক সহযোগী অধ্যাপক এ. টি. এম. যায়েদ হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে পাঠদান করছি। যদিও এই দিনে আলাদা কোনো আয়োজন করা হয় না, তবে প্রতি বছরই আমি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সামনে তিতুমীরের অবদান ও জীবনী নিয়ে আলোচনা করি। তিতুমীর মীর বংশের ছিলেন না; তাঁর বংশধররা দাবি করেন, তাঁরা সাঈদ বংশের। তিনি সাধারণ কোনো মানুষ ছিলেন না; তিনি ছিলেন হাফেজে কোরআন এবং তৎকালীন সময়ের একজন দক্ষ লাঠিয়াল। শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, সারা দেশজুড়ে এই দিনে তাঁকে স্মরণ করা এবং তাঁর অবদান সামনে তুলে ধরা উচিত।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল কাশেম শেখ বলেন, শহীদ তিতুমীর ছিলেন বিদ্রোহী নেতা। তিনি ইংরেজ ও জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। আমি মনে করি, এখানে উপস্থিত প্রত্যেকেই একেকজন তিতুমীর। কারণ তিতুমীর মানুষের জন্য কাজ করেছেন, কৃষকের জন্য কাজ করেছেন। আজ তাঁর স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে আলাদা বাজেট থাকার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। আপনাদের এই সাংবাদিক সমিতির সংগঠনকে আমি ইউনেস্কোর সাথে সমন্বয় করে দেব, যাতে ভবিষ্যতে বৃহত্তর পরিসরে আয়োজন করতে পারে।
ঢাকা-১৭ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. এস. এম. খালিদুজ্জামান বলেন, ভারতবর্ষের মানুষের অধিকার আদায়ে প্রথম শহীদ তিতুমীর। তাঁর ইতিহাস আমাদের তরুণ প্রজন্মসহ সকলকে অনুপ্রেরণা দেয়। ২৪-এর আন্দোলন মূলত তিতুমীরের আন্দোলনেরই ধারক-বাহক। দুঃখজনক হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর যথাযথ মর্যাদা ও আলোচনা আমরা দেখতে পাই না। আরও দুঃখের বিষয় হলো, যে কলেজ তাঁর নামে সেখানে বড় কোনো আয়োজন করা হয়নি। সাংবাদিকরা যেমনভাবে তাঁকে স্মরণ করে আয়োজন করেছে, তা নিঃসন্দেহে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, তিতুমীরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে তাঁকে আড়াল করা হয়েছে। ২৪-এর আকাঙ্ক্ষার আলোকে বাংলাদেশ গড়তে হলে তিতুমীরের কাছে ফিরে যেতে হবে। তাঁর পথ অনুসরণ করেই ২৪-এর বিপ্লবীরা রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাই শহীদ তিতুমীরের সংগ্রাম, অবদান ও জীবনীকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ও স্মরণ করার আহ্বান জানান বক্তারা।
আলোচনা সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা শামিম হোসেন শিশির, তাওসীফ মাইমুন, সতিকসাসের সদস্যরা, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।