ঢাকা: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব অফিসে সঞ্চয়পত্রসহ পাঁচ সেবা বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী রোববার (২৩ নভেম্বর) থেকেই এটি কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কী পয়েন্ট ইনস্টশেলন (কেপিআই)ভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট এসব সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে এসব সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছিল যে, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য শাখা অফিসগুলোতেও এসব সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আজ বৃহস্পতিবারের (২০ নভেম্বর) পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, সদরঘাট, বরিশাল ও রংপুর অফিস হতে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রয়, ছেঁড়া-ফাটা নোট বিনিময় এবং এ-চালানসহ তৎসংশ্লিষ্ট সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি জানায়, বিশ্বের কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাউন্টার থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষকে এ ধরনের সেবা দেওয়া হয় না। কী পয়েন্ট ইনস্টশেলনভুক্ত (কেপিআই) প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকসংশ্লিষ্ট এসব সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন নির্বিঘ্নে জনসাধারণকে এসব সেবা দেয়, তা নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়াবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বিশ্বের কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাউন্টার থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষকে এ ধরনের সেবা দেয় না। আলোচ্য সেবাগুলো তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করতে বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় অফিস এসব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ২২ জুন মতিঝিল অফিসের ক্যাশ বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এরপর একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কমিটির সুপারিশে গ্রাহকদের সব ধরনের সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এরও আগে গত ১৮ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। সেখানে আলোচনা হয়, এর আগে দুইজন গভর্নর গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এদিকে গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সার্ভার জালিয়াতি করে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। আরও দুইজনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা শেষ সময়ে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এরপর থেকে মতিঝিল অফিসের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আর সব ব্যাংক শাখায় প্রাইজবন্ড পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলো ছেঁড়াফাটা নোট বদল ও অটোমেটেড চালান সেবাও দেয়। তবে ভোগান্তিমুক্ত সেবা ও আস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকেই বেশি ভিড় করেন গ্রাহক। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে গ্রাহকদের তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে।