চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিষয়ে সম্মিলিত বিবৃতি দিয়েছেন বিশিষ্ট ১০ নাগরিক। এতে বন্দর নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের করা চুক্তিগুলো এখতিয়ারবহির্ভূত, আত্মঘাতী ও দেশের স্বার্থবিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল সম্মিলিত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- কবি আবুল মোমেন, অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম, লেখক ফেরদৌস আরা আলীম, শিশির দত্ত, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ওমর কায়সার ও কামরুল হাসান বাদল, কমল সেনগুপ্ত, চারুশিল্পী অলক রায় এবং প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।
বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, বর্তমান সরকার একটি ইন্টেরিম বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বন্দর পরিচালনার মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদনের দায়িত্ব এ সরকারের নয়। এমন চুক্তি করতে পারে শুধুমাত্র জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকার। সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেক্ষেত্রে একটি নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগেভাগে খুব তড়িঘড়ি করে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে জাতির মানসে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩৩ বছরের চুক্তি করেছে সরকার। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে চুক্তিতে। একইদিন কেরাণীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ২২ বছর মেয়াদে পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
অস্বাভাবিক দ্রুততায় মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে চুক্তির কার্যক্রম শেষ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, ‘চুক্তিতে টার্মিনেশন, ক্ষতিপূরণসহ যেসব আর্থিক বিষয় আছে, সেগুলো কেন গোপন রাখা হলো? এরপর নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালও বিদেশিদের দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। অথচ টার্মিনালটি দেশীয় জনবল দিয়ে লাভজনকভাবেই পুরোদমে চালু আছে। বর্তমানে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনা করছে। প্রশ্ন হলো, লাভজনকভাবে চালু টার্মিনালটি কেন আমরা বিদেশিদের দেবো, যেখানে কোনো নতুন বিনিয়োগের সুযোগ নেই ? বর্তমান সরকারও কেন বিগত সরকারের পথে হাঁটবে, সে প্রশ্নও সঙ্গতভাবেই উঠছে।’
‘বন্দরের হাতে আর মাত্র দু’টি টার্মিনাল আছে। জেনারেল কার্গো বার্থ এবং চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল। এই দুটো পরিচালনা করছে দেশীয় অপারেটররা। এর মধ্যে চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালেও বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে দুই বিদেশি কোম্পানি। এটিও যদি চলে যায় তাহলে হাতে থাকবে শুধু জেনারেল কার্গো বার্থ বা জিসিবি। এটি সবচেয়ে পুরোনো। গ্রিনফিল্ডে টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ আসবে সন্দেহ নেই। বে-টার্মিনালেও বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে। তবে এখন চালু টার্মিনালগুলো যেভাবে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে তাতে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই দাঁড়াতে পারবে না। অর্থাৎ বন্দর খাতে আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তৈরির কোনো সুযোগ থাকবে না।’
বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্তকে দেশের স্বার্থবিরোধী তাই আত্মঘাতী বলেই অভিহিত করা ছাড়া উপায় থাকে না। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো সংকটের সময় দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান দায়িত্বরত থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু পুরোটাই যদি বিদেশিদের হাতে চলে যায়, তখন সংকট থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আমাদের হাতে থাকবে না। জাতি বিদেশি অপারেটরদের কাছে জিম্মি হয়ে যেতে পারে।’
‘আমরা চলতে চাই, এ ধরনের চুক্তি করার এখতিয়ার একটি ইন্টেরিম সরকারের নেই। এই চুক্তি আত্মঘাতী, দেশের স্বার্থবিরোধী। সরকারের এ ধরনের ন্যক্কারজনক ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে আমরা জনগণের দরবারে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ চুক্তি দুটি বাতিলের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার আবেদন জানাই।’