ভিটামিন এ ক্যাপসুল: রাতকানা রোগ কমে দশমিক ০৪ শতাংশ
১৩ জুলাই ২০১৮ ০৯:০২
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আনুষ্ঠানিকভাবে ভিটামিন এ ক্যাপসুল বিতরণ করায় দেশে রাতকানা রোগ কমে দশমিক শূন্য চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেবল রাতকানা রোগই নয়, কমেছে নবজাতক থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের আগে রাতকানা রোগে ভোগা শিশুদের সংখ্যা ছিল তিন দশমিক ৭৬ শতাংশ। আনুষ্ঠানিকভাবে ভিটামিন এ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন শুরু হলে এই হার কমে এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিটামিন এ ক্যাপসুলের কারণে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। রোগ মুক্তি ছাড়াও, শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমছে। যে কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বছরে দুইবার জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন করে। এ বছর ক্যাম্পেইনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ভিটামিন এ খাওয়ান, শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমান’।
আগামী ১৪ জুলাই ক্যাম্পেইনের প্রথম রাউন্ডে সারাদেশে প্রায় আড়াই কোটি শিশু ভিটামিন এ ক্যাপসুল পাবে। এর মধ্যে ছয় মাস থেকে ১ বছর বয়সী ২৫ লাখ শিশুকে ১টি করে নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল চার ফোঁটা এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী ১ কোটি ৯৮ লাখ শিশুকে ১টি করে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল আট ফোঁটা করে খাওয়ানো হবে।
ঢাকা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা শহরের ২ হাজার ১৮৪টি আইপিএ সেন্টার ছাড়াও অতিরিক্ত ১৬০টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন চলবে।
ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. এহসানুল করিম বলেন, একটি শিশুও যেন ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন থেকে বাদ না পড়ে, এ লক্ষ্যে ৯০ শতাংশের বেশি শিশু যাদের বয়স ১২ থেকে ৫৯ মাস তারা প্রতি ছয় মাস অন্তর বছরে দুইবার লাল রঙের ভিটামিন এ (দুই লাখ আই ইউ) ক্যাপসুল পাবে। এছাড়া ৯০ শতাংশের বেশি শিশু যাদের বয়স ৬ থেকে ১১ মাস তারা প্রতি ৬ মাস অন্তর বছরে একবার নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ (এক লাখ আই ইউ) ক্যাপসুল পাবে। সে লক্ষ্যে নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে এসব ক্যাপসুল পৌঁছে দেওয়া হবে।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইন্সটিটিউশনের পরিচালক ডা. সমীর কান্তি সরকার সারাবাংলা’কে বলেন, ২ কোটির কিছু বেশি শিশুকে এবারে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। তবে গত ১০ বছরে মোট কত শিশুকে এই ভিটামিন খাওয়ানো হয়েছে সে বিষয়ে সঠিক কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। কারণ হিসেবে ডা. সমীর কান্তি সরকার বলেন, ইপিআই জরিপের সময় খোঁজ নেওয়া হয় ভিটামিন এ ক্যাপসুল কত শিশু খেয়েছে- তার ভিত্তিতে একটা সংখ্যা দাঁড় করানো হয়। আর চার থেকে পাঁচ বছর পর পর বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক সার্ভে (বিডিএস) হয়। সেখানেও এই সংক্রান্ত সব কিছু সমন্বিতভাবে নেই।
ডা. সমীর কান্তি সরকার বলেন, বিডিএস’র জরিপ পদ্ধতির সঙ্গে আমরা একমত না। যদিও জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিজস্ব কোনও জরিপ হয় না। কারণ জরিপ করার মতো বাজেট আমাদের নেই, লোকবল নেই আর সুযোগও নেই। জন সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর গ্রামের মানুষের কাছে সেটা হয়ে যায় পোলিও টিকা। তারা এসব কিছু নিয়ে সচেতন না- তাদের কাছে টিকা মানেই পোলিও। যার কারণে ‘ভিটামিন এ’ নিয়ে আমরা নিজেরাও নিশ্চিত হতে পারি না।
সমীর কান্তি সরকার বলেন, কোনও দেশে যদি নির্দিষ্ট কোনও রোগ এক শতাংশ বা তার বেশি হয় তাহলে তাকে ‘পাবলিক হেলথ প্রবলেম’ ধরে নেওয়া হয়। এখন আমরা সেই পাবলিক হেলথ প্রবলেম-এর অনেক নিচে রয়েছি। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
সারাবাংলা/জেএ/এটি/এএস