ঢাকা: গত জুন শেষে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪৪ ও ৫৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক খাত হালনাগাদ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা বা ৪৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা বা ৩৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বেসরকারি ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে শরিয়াভিত্তিক ১০টি ইসলামী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ। সে হিসাবে উচ্চ খেলাপিতে ভুগছে শরিয়াহ ব্যাংকগুলো।
এছাড়া আলোচ্য সময়ে বিদেশি ৯ ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার প্রথম প্রজন্মের (১৯৭২-১৯৮৭) ব্যাংকগুলোতে ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রজন্মের (১৯৯২-১৯৯৮) ব্যাংকগুলোতে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, তৃতীয় প্রজন্মের (১৯৯৯-২০১১) ব্যাংকগুলোতে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ, চতুর্থ প্রজন্মের (২০১৩-২০১৫) ব্যাংকগুলোতে ৫৩ শতাংশ এবং পঞ্চম প্রজন্মের ব্যাংকগুলোতে (২০১৬-২০২১) খেলাপি ঋণের হার ৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি ৮৪৬ টাকা। এটি ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। আর চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৩৩ কোটি টাকা। এটি ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ লাখ ৫ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, খেলাপি ঋণ যে হঠাৎ করে বেড়েছে, তা নয়। মূলত বিগত সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা অপ্রদর্শিত খেলাপি প্রকাশ করায় হারটা উচ্চ পর্যায়ে গেছে। এটা নেতিবাচক ইংগিত দেয়। অনেক ব্যাংক স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকিং করতে পারছে না। তবে খেলাপি আদায়ে কঠোর নিদের্শনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও রাতারাতি তা সম্ভব হবে না। তবে আগের চেয়ে আদায় হার ভালো। এটা আরো বাড়ানো উচিত।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলা-কে বলেন, খেলাপি ঋণের উচ্চ হার শুধু ব্যাংক খাতে নয়, সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অস্বস্তিতে পড়ছে। এতে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। কর্মসংস্থানও আশানুরূপ বাড়ছে না। এ পরিস্থিতিতে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঋণ আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেন তিনি।