ঢাবি: ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বন্ধ ও রোববার বিকেল ৫ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাত ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের সামনে অবস্থান নেন। তবে, অনেকেই হলে জমায়েত করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত এসেছে কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ভবন থেকে মুহসীন হল ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের নারী শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য। তারা ভূমিকম্পে পুরাতন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন ভবন প্রাপ্তির ঘোষণা না পাওয়ার প্রতিবাদে কর্মচারীদের ভবনে উঠেছেন।
হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ নিজ ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে লিখেন, ‘মুহসীন হল এবং মৈত্রী হলের শিক্ষার্থীরা কর্মচারী ভবনে অবস্থান নেওয়ার কারণেই ১৫ দিনের বন্ধের সিদ্ধান্ত। ভূমিকম্পের কারণে প্রথমে মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা কর্মচারী ভবনে অবস্থান নেয়। মুহসীন হলের শিক্ষার্থী তাদের দাবিতে অনড় তারা কর্মচারী ভবন ছাড়বেন না এবং আজকে মৈত্রী হলের মেয়েরাও যখন কর্মচারী ভবনে অবস্থান নেয় তখনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণার জন্য জরুরি মিটিং ডেকেছে বলেই আমার ধারণা। কর্মচারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এতো মায়া কেন? ১৫ দিনের মধ্যে কি ঝুকিপূর্ণ হলগুলো ঠিক হয়ে যাবে? নতুন ভবন উঠবে? আমার দাবি কর্মচারীদের ১৫ দিনের ছুটি দিয়ে দেওয়া হোক আর আমাদের কর্মচারী ভবনগুলোতে সেখানে স্থানান্তর করুক।’
এদিকে মুহসীন হলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. জুলহাস উপাচার্য ভবনের ফটকে অবস্থানের বিষয়ে লিখেছেন, ‘ভিসি স্যার আমাদের কথা দিয়েছিলেন যেকোনো সমস্যায় ভিসি বাসভবনের গেট খোলা আছে, একারণে আমরা ভিসি স্যারের বাসার গেটে অবস্থান নিয়েছি। হয় আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক, না হলে স্যারের কথা মত উনার বাসভবনে জায়গা দিক।’
এর আগে শুক্রবার সকালে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল সারাদেশ। এ ঘটনায় আতঙ্কে বিভিন্ন হল থেকে বের হতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬ জন শিক্ষার্থী আহত হন। শনিবার সন্ধ্যায় ও মৃদু ভূমিকম্পে আতঙ্কে আরো ৬ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এর প্রতিবাদে মহসিন হল প কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থীরা কর্মচারীদের ভবনে গিয়ে ওঠেন।
হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের প্রভোস্ট মো. সিরাজুল ইসলাম শনিবার সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা ভূমিকম্পের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে কর্মচারীদের ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। আফটার শকের কথা মাথায় রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ আমরা সকলেই বিষয়টা মানবিক দৃষ্টিতে দেখছি। উপাচার্য এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের শিফট করে আপাতত রাখতে বলেছেন। রোববার সকাল ৯ টায় বুয়েট থেকে অভিজ্ঞ অধ্যাপক দ্বারা হলটি রিচেক করা হবে। হল যদি উপযোগী হিসেবে মনে করেন তারা তবেই শিক্ষার্থীরা চিন্তামুক্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সভা করে এবং কথা বলেই নেব।’
তবে শিক্ষার্থীদের হলে ফেরা এখন অনিশ্চিত। কর্মচারী ভবনে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তারা কর্মচারীদের ভবন ‘স্বাধীনতা টাওয়ার’ ছাড়বেন না।
এমনই এক শিক্ষার্থী মুহসীন হলের সারোয়ার হাসান। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল হল ছাড়তে হলে কর্মচারী বিল্ডিং এই উঠব, ওইটা সেইফ বলেই হয়তো খোলা থাকবে।’
এদিকে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকের প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত দ্বীচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। দুই সপ্তাহে প্রশাসন কি এমন হলের উন্নয়ন করবে যে দুই সপ্তাহের জন্য তারা বন্ধ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্মচারীদের জন্য উচ্চ ভবনে ফ্লাটের ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষার্থীদের হল নির্মাণের বেলায় কোন পদক্ষেপ নেই।’