চাঁপাইনবাবগঞ্জ: বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কেবল রোপা আমন কাটার প্রাণচাঞ্চল্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠজুড়ে চলছে ধান কাটা, মাড়াই আর পরিবহণের কাজ। আগাম জাতের রোপা ধান কাটা শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। এখন ধীরে ধীরে তা পুরো জেলার মাঠজুড়েই দেখা যাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা মৌসুমের শুরু থেকেই ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছিলেন। তবে গত মাসে হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে সেই আশায় খানিকটা ধাক্কা লাগে। কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টিতে জমি তলিয়ে যায়, আবার অনেক স্থানে ধানগাছ নুয়ে পড়ে। এতে ফলন কিছুটা কমার আশঙ্কা দেখা দেয়।
যদিও এরই মধ্যে জেলায় ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৩ মেট্রিক টনের বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে, যা সামগ্রিক উৎপাদন পরিস্থিতিকে আশাব্যঞ্জক করে তুলেছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমের শুরুর প্রতিকূলতা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে পারলে শেষ পর্যন্ত ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন পর্যন্ত ধানের দাম বেশ ভালো। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলেও এবং বৃষ্টিজনিত ক্ষতি থাকলেও বর্তমান বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকলে তারা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
কৃষক মাইনুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে পানি জমে ধানের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সেখান থেকে কিছুটা সান্ত্বনা মিলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘এখনো জেলার বড় অংশের ধান কাটা বাকি। পুরো মৌসুমের উৎপাদন বিশ্লেষণ করতে আরও সময় লাগবে। তাই এখনই কৃষকের লাভ-লোকসান নির্ধারণ করা কঠিন। তবে প্রাথমিকভাবে ফলনের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা ইতিবাচক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাকি জমির ধানও দ্রুত কাটা সম্ভব হবে এবং কৃষকেরা ভালো দাম পেলে সামগ্রিকভাবে এ মৌসুম সফল হবে।’
মাঠঘুরে দেখা গেছে, কাটামাড়াইয়ের কাজে জেলাজুড়ে শ্রমিক সংকটের মতো সাধারণ চ্যালেঞ্জ থাকলেও কৃষকেরা দৃঢ় মনোবল নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। ধান কাটার পাশাপাশি কেউ কেউ এরই মধ্যে পরবর্তী রবি মৌসুমের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন মৌসুমে আশার আলো দেখছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ দু’পক্ষই।