ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে কি না এখন তা নির্ভর করছে ভারতের ওপর। সিএনএন-এর এক বিশদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অনুপস্থিতিতে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা বর্তমানে নয়াদিল্লিতে আত্মগোপনে আছেন, যেখানে তিনি গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আশ্রয় নেন।
সিএনএন জানায়, ২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভ দমনে সহিংস অভিযানের দায়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। আদালতের মতে, বিক্ষোভকারীদের হত্যার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি ‘পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত’ হয়েছে। শেখ হাসিনা অবশ্য কোনো ধরণের অপরাধের কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন। ঢাকা এখন নয়াদিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রত্যার্পণ দাবি করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দ্বিপাক্ষিক প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় ভারতকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সিএনএন তার প্রতিবেদনে বলেছে, ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান শাসন শেষে ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনার সরকারকে পতনের দিকে ঠেলে দেয়। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দ্রুত রূপ নেয় সরকারবিরোধী দেশব্যাপী আন্দোলনে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্য উদ্ধৃত করে সিএনএন জানায়, দমন-পীড়নে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠলে গত আগস্টে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবাশার হাসান সিএনএনকে বলেন, ‘তিনি পালিয়েছেন এটাই তার দায় স্বীকারের ইঙ্গিত। তিনি জনগণ, রাষ্ট্রীয় শক্তি সবাইকে চরমভাবে বিরোধিতার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন।’
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের আস্থার সম্পর্ক এখন কঠিন পরীক্ষার মুখে। দিল্লিতে তার তিন দশকের অন্যতম ঘনিষ্ঠ আঞ্চলিক মিত্রের আশ্রয়ে থাকলেও ভারত এখন অত্যন্ত সাবধানে এগোচ্ছে।
ভারতের আইন ও দুই দেশের প্রত্যার্পণ চুক্তিতে থাকা ‘পলিটিকাল অফেন্স এক্সেপশন’ প্রয়োগ করলে ভারত তাকে ফেরত না-ও পাঠাতে পারে বলে সিএনএন উল্লেখ করেছে। সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত সিএনএনকে বলেন, ‘ভারত অবশ্যই বিষয়টি রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে দেখতে পারে। তাছাড়া শেখ হাসিনা এখনো সব আইনি প্রতিকারের পথ শেষ করেননি।’
হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ সিএনএনকে দেওয়া মন্তব্যে বলেন, ‘ভারত তার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। ভারত সবসময়ই আমাদের বন্ধু।’
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তই এখন নির্ধারণ করবে মৃত্যুদণ্ডের ভবিষ্যৎ।