ঢাকা: আসছে ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এরই মধ্যে প্রায় আড়াইশ’ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলটি বলছে, এটি প্রাথমিক তালিকা। এই তালিকায় পরিবর্তনও আসতে পারে। এদিকে এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তাই, দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের পক্ষে নানা কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছেন তাদের অনুসারীরা। বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, মশাল মিছিল, সড়ক অবরোধ, কাফনের কাপড় পরে মিছিল করাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ২৩৭ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর পর আরও কয়েকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দফা দফায় ভার্চুয়াল মিটিং করেন। যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন তাদের গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নানাভাবে বক্তব্য দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার সঙ্গে সবাইকে কাজ করতে হবে। অন্যথায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা ওয়াদাও করেছিলেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে সবাই তার সঙ্গে কাজ করবেন। কিন্তু মনোনয়ন ঘোষণার পর অনেকে সেই ওয়াদা মেনে চললেও ৫০টির বেশি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত অনেকে তা মেনে নিতে পারেননি। যার প্রতিফলন মাঠে দেখা যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে প্রতিবাদ ততই তীব্র হচ্ছে।
সূত্র জানায়, যেসব নেতা তার এলাকার বিরোধীপক্ষকে ম্যানেজ করতে পেরেছেন সেসব জায়গায় বিরোধিতা হচ্ছে না। কিন্তু যেসব আসনের প্রার্থীরা সেটা করতে পারেননি সেখানে ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়ছেন মনোনয়নপ্রাপ্তরা। প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার প্রথম সপ্তাহে ১০/১৫টি আসনে প্রতিবাদ হলেও দিন যত গড়াচ্ছে ততই নতুন নতুন আসনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, রাস্তা অবরোধ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিল বেড়েই চলেছে।
সর্বশেষ ২২ নভেম্বর রাতে ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা আকতার তুলির প্রতিপক্ষ এসএ সিদ্দিক সাজুর পক্ষে কয়েক হাজার মানুষ মশাল মিছিল করে সাজুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানায়। দলের একটি সূত্র জানায়, সানজিদা তুলিকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি কথা বলেন এসএ সিদ্দিক সাজুর সঙ্গে। দল ক্ষমতায় গেলে তাকে মূল্যায়ন করা হবে এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়। তখন সাজু চেয়ারম্যানের বক্তব্য মেনে নিলেও রাস্তায় মানুষ নামিয়ে রাতেই (২২ নভেম্বর) শোকজ নোটিশ পেয়েছেন।
মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে আরও যেসব আসনে আন্দোলন হচ্ছে
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও আংশিক আকবরশাহ-পাহাড়তলী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে ৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলন চলছে। সর্বশেষ ২২ নভেম্বর ৪০ কিলোমিটার মানববন্ধন করেছেন নেতাকর্মীরা। এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাহবুবের রহমান শামীমের প্রার্থিতা বাতিল করে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তার সমর্থকরা।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিএনপির এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে স্থানীয় প্রার্থী দেওয়া হলেও রাজশাহী-৩ আসনে বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের একাংশ অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিয়ার মনোনয়ন বাতিল করে রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন শওকতকে চূড়ান্ত প্রার্থী করার দাবি জানান।
পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের মনোনয়ন বাতিল করে স্থানীয় কোনো নেতাকে প্রার্থী করার দাবিতে মশাল মিছিল ও পথসভা করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে সড়কে ভ্যান মিছিল করেছেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। চার শতাধিক ভ্যান নিয়ে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার ও প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সালমান ওমর রুবেলের সমর্থকরা। এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সকে।
মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে জেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করা হয়। আসনটিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাসুদ অরুন।
মেহেরপুর-২ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে ২০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকরা। ৩ নভেম্বর মনোনয়ন ঘোষণার পরদিন থেকে এখানে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে। দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদফা সংঘর্ষ হয়েছে। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি অব্যাহত রয়েছে। মনোনয়নবঞ্চিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ সোহরাবের অনুসারীরা এ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিএনপির দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তার পক্ষে এবং বঞ্চিত প্রার্থীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে পালটাপালটি মিছিল, সভা-সমাবেশ করেছেন। এ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মান্নান। তার বিরুদ্ধে সাত প্রার্থী একই মঞ্চে ওঠেন। তাদের দাবি, সাতজনের যে কোনো একজনকে মনোনয়ন দিতে হবে। তারা হলেন–তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, সাইদুল হক সাইদ, সালাহ উদ্দিন ভূঁইয়া শিশির, নাজমুল হোসেন তাপস, নাজমুল করিম, কে এম মামুন অর রশিদ ও রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকরা আন্দোলন করছে। আসনটি ১২দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার জন্য রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। আসনটিতে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। ২২ নভেম্বর এই আসনে বিএনপি ও জাতীয় দলের এহসানুল হুদার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এহসানুল হুদা দাবি করেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের সমর্থকরা তার সমর্থকদের মিছিলে হামলা করেছে। অনেকগুলো গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের সমর্থনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে দলের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীরা। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে তার প্রতিপক্ষ ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন পাওয়া মোশারফ হোসেনের সমর্থকরা আন্দোলন করছেন। এরই মধ্যে মিলনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জানিয়ে মোশাররফ সমর্থকরা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গত ২০ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে কচুয়া উপজেলার নেতারা ওই সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি তোলেন।
সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মনোনয়নবঞ্চিত রাহিদ মান্নান তালুকদার লেলিনের অনুসারীরা আন্দোলন করছেন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আইনুল হক।
নাটোর–১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী, মিডিয়া সেল সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুলকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। ৩ নভেম্বরের পর তার সমর্থকরা বিশাল সমাবেশ করে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।
মৌলভীবাজার–২ (কুলাউড়া) আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকুকে। এ আসনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার সমর্থকরা এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, পথসভা ও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করেন।
মাদারীপুর-১ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন কামাল জামান নুরুউদ্দিন মোল্লা। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু। প্রার্থী ঘোষণার পর পরই প্রতিবাদে লাভলুর কর্মী-সমর্থকরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চরে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। এ আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পরদিন কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি।
সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আলিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফ। প্রার্থী ঘোষণার পরদিন রাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে মশাল মিছিল করেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের সমর্থকেরা।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-কালিগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দিন। তিনি আগে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জাতীয় পার্টি (নাজিউর) থেকে নির্বাচিত এমপি ছিলেন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন ডা. শহিদুল আলম। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় টানা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
টাঙ্গাইল–৩ (ঘাটাইল) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এস এম ওয়াবদুল হক নাসিরের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ আসনে স্থানীয় বিএনপির বড় একটি অংশ প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছে। এ দাবিতে টানা মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। তারা নাসিরের পরিবর্তে সাবেক মন্ত্রী লুৎফর রহমান আজাদ অথবা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলামকে চূড়ান্ত প্রার্থী করার দাবি জানান। এ দাবিতে লুৎফর রহমান আজাদের সমর্থকরা গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসার সামনেও বিক্ষোভ করেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসন আড়াইহাজারে বিএনপি’র ঘোষিত প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে তিন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা বিএনপি’র (ঢাকা-বিভাগীয়) সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে দেওয়া প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান।
সুনামগঞ্জ–১ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আনিসুল হক। দলীয় সূত্র বলছে, ওয়ান–ইলেভেনের সময় তিনি সংস্কারপন্থী ছিলেন বলে স্থানীয়ভাবে তার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে। যুবদলের সাবেক সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে গণমিছিল করেছে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় বিএনপির একাংশ।
জামালপুর-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সুলতান মাহমুদ বাবুকে। এই আসনে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম। গত ১৯ নভেম্বর কাপনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ করেন ইসলামপুর উপজেলা বিএনপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। তারা বাবুর পরিবর্তে আব্দুল হালিমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দলটির চার নেতা ও দলীয় মনোনয়প্রত্যাশী। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্যাডে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ চিঠি পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। চিঠিতে চার মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছেন। এ আসনে বিতর্কিত নেতা এনামুল হককে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সরওয়ার জামাল নিজাম প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন। তার মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে আন্দোলন করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের অনুসারী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এম এ হান্নানকে। এই আসনে অ্যাডভোকেট একেএম কামরুজ্জামান মামুন মনোনয়ন চান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৪ আসনে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে সম্ভাব্য প্রার্থী করা হয়েছে। বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছি, পাশাপাশি গত ১৭ বছর তিনি কানাডা প্রবাসী ছিলেন। দুঃসময়ে তাকে না পাওয়ার অভিযোগে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। এ আসনে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী কবির আহমদ ভূইয়ার সমর্থনে প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন বঞ্চিত তিন বিএনপি নেতা ও তাদের সমর্থকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধেরও চেষ্টা করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মমিন আলী ও ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন। তারা এ আসনের বিএনপির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সিরাজদীখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মো. আবদুল্লাহ।
কুষ্টিয়া–৪ আসনে সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমিকে প্রার্থী করা হয়েছে। বয়স আশির কোটার এই নেতার পরিবর্তে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদীকে প্রার্থী হিসেবে চান অনেকেই। তরুণ প্রজন্ম ও নারী ভোটারদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হওয়া এবং দীর্ঘদিন মাঠে সক্রিয় থাকার কারণে তার প্রতি সমর্থন বেশি বলে মত স্থানীয়দের।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তির মনোনয়ন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় ৮৯ নেতা।
নোয়াখালী–২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মশালমিছিল ও সমাবেশ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা কাজী মফিজুর রহমানের সমর্থকেরা। আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সদরের আংশিক) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সমর্থকেরা। ১৯ নভেম্বর কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট বাজারে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। ওই আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন ফখরুল ইসলাম।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ) আসনে বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী পরিবর্তন করে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হুদাকে দেওয়ার দাবিতে গণমিছিল ও গণসমাবেশ হয়েছে। এ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হারুনুর রশিদকে পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ হান্নানের অনুসারী নেতা-কর্মীরা।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পরিবর্তন করে শাম্মী আক্তারকে পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন চুনারুঘাট উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন এস এম ফয়সাল।
জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া আব্দুল বারীকে পরিবর্তন করে গোলাম মোস্তাফাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ কর্মসূচি পালন করেন গোলাম মোস্তফার অনুসারীরা।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার জিয়াউল ইসলামকে পরিবর্তনের দাবিতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। তারা এ আসনে আরেফিন আজিজ সরদারকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে আবেদন জমা দিয়েছেন। তবে কতগুলো তা বলতে পারব না। এ বিষয়ে দলের হাই কমান্ড শিগগির সিদ্ধান্ত দেবেন।’