Tuesday 25 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট
তফসিল ৪ ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন

নাজনীন লাকী স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:১৪ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৪৮

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: সরকার ও নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময় অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। সেক্ষেত্রে বলা যায়, দরজায় কড়া নাড়ছে ভোট। এবার একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। তবে এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি নির্বাচনের তফসিল ও ভোটের তারিখ। ফলে এ নিয়ে দেশের সর্বত্র চলছে জল্পনা-কল্পনা।

তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সারাবাংলার অনুসন্ধানে সম্ভাব্য দিন বেরিয়ে এসেছে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদক তফসিলের তারিখ জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিলের তারিখ ঘোষণা করা হবে। আর নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এক ধাপ এগিয়ে জানান, ডিসেম্বরের ৪ তারিখ তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তিনি সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোনো কারণে যদি ৪ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ না হয়, তাহলে ৭ তারিখ ঘোষণা করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

ডিসেম্বরের ৮ থেকে ১১ তারিখের মাঝে কোনো একদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে কি না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, ৭ তারিখের আগেই কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। এবার যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে, সেজন্য ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটার দিন ঠিক রেখে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা করছে ইসি।’

এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবার একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই হিসাবে কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করতে হলে ৩ বা ৪ ডিসেম্বর বেছে নিতে হবে। কারণ, ৫ ও ৬ তারিখ হচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির (শুক্র ও শনিবার) দিন। ছুটির দিনে তফসিল ঘোষণার নজির নেই। আর দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করতে হলেও ৭ থেকে ১১ তারিখ হয়ে যায়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজান মাস শুরুর আগে ৫ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

এছাড়া, যেহেতু কমিশন এবার ভোটগ্রহণের আগে ৬০ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করতে চায়, সেক্ষেত্রে ৭ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা।

এদিকে, জাতীয় সংসদ ও গণভোট একসঙ্গে করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে ভোটের সরঞ্জাম কেনাকাটা, লজিস্টিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের বড় প্রস্তুতির মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন অন্যতম। এর বেশির ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। তবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে।

এর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চলছে নির্বাচন কর্মকর্তাদের রদবদল, প্রশিক্ষণ এবং সমন্বয় সভা, যাতে মাঠ প্রশাসন দক্ষ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কেন্দ্র ও বুথ পর্যায়ে ভোটকেন্দ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ব্যাপক মোবিলাইজেশন করছে। এছাড়া, পর্যবেক্ষক, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের সমন্বয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য এদের সঙ্গে সংলাপের কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছেন কমিশন।

২৭ নভেম্বর আরেক দফা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইসি। এদিন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনামূলক বৈঠক করবেন সিইসি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ বাহিনী প্রধান ও সংস্থা, বিভাগের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর ৩০ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ২২ জন সচিব ও বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে পৃথক আরেকটি বৈঠক করবে। ওই বৈঠকে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরিসহ নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেবে ইসি।

এছাড়াও আগামী ২৯ নভেম্বর গণভোট ও সংসদ নির্বাচনের ‘মক ভোটিং’র আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। মক ভোটিংয়ে একজন ভোটার ভোটকেন্দ্রে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, একজন ভোটারের ভোট দিতে কত সময়ের প্রয়োজন হবে, ভোটকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার-এসব বিষয় স্বচক্ষে দেখবেন নির্বাচন কমিশনাররা। একইসঙ্গে বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভোটকক্ষে কী ধরনের ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়, সেটাও পরীক্ষা করা হবে।

আর মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে কতজন ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ হওয়া উচিত, তা নির্ধারণের কথা রয়েছে।

এক নজরে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ও ভোটের ইতিহাস

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয় ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি। ৬০ দিন পর ৭ মার্চ ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর। ১৯৮৬ সালের ২ মার্চ তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ৪৭দিন পর ৭ মে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। ৬৯ দিন আগে ১৯৮৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৯০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করা করা হয়েছিল। ৭৮ দিন পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের তফসিল হয় ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর। ৩ বার পুনঃতফসিলের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হয়।

সপ্তম জাতীয় সংসদের ভোটের তফসিল হয় ১৯৯৬ সালের ২৭ এপ্রিল। ৪৭ দিন পর ১২ জুন ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। ২০০১ সালের ১৯ আগস্ট অষ্টম জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা হয়। ৪২ দিন পর ১ অক্টোবর ভোটগ্রহণ করা হয়। নবম জাতীয় সংসদের তফসিল হয় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। পুনঃতফসিলে পর ২৯ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। তফসিল ঘোষণার ৪২ দিন পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করা হয় ৮ নভেম্বর ২০১৮, আর ভোটগ্রহণ হয় ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮। আর দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ১৫ নভেম্বর ২০২৩, আর ভোট হয় ৭ জানুয়ারি ২০২৪।

এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তফসিল ঘোষণার সাধারণত ৪৫ থেকে ৭৮ দিনের মধ্যে। সবচেয়ে কম সময় (৪২ দিন) লেগেছে অষ্টম ও দশম নির্বাচনে, আর সবচেয়ে বেশি সময় (৭৮ দিন) পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে বুধবার চারটি, রোববার চারটি। আর বৃহস্পতিবার ও সোমবার দুটি করে।

বিজ্ঞাপন

আরো

নাজনীন লাকী - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর