গত বছর বিশ্বজুড়ে ৫০ হাজারের বেশি নারী ও কিশোরী তাদের প্রিয়জন বা পরিবারের সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন, সংখ্যায় যা গড়ে প্রতিদিন ১৩৭ জন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস (২০২৫) উপলক্ষ্যে প্রকাশিত জাতিসংঘ ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিস (ইউএনওডিসি) ও ইউএন উইমেনের নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৮৩ হাজার নারী ও কিশোরী হত্যার শিকার হয়েছেন, যার ৬০ শতাংশই প্রাণ হারিয়েছেন নিজেদের স্বামী, সঙ্গী অথবা পরিবারের সদস্যদের হাতে।
এর তুলনায়, পুরুষ হত্যার মাত্র ১১ শতাংশ পরিবারের সদস্য বা সঙ্গীর হাতে ঘটে।
জাতিসংঘ বলছে, এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু সুরক্ষার ঘাটতি, পুলিশের অপ্রতুল প্রতিক্রিয়া এবং সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থার দুর্বলতার মতো বিষয়গুলো নারীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। একই সঙ্গে, অনেক দেশে তথ্য সংগ্রহের দুর্বলতা, নির্যাতনের শিকার নারীদের অভিযোগ করতে না চাওয়া এবং পুরনো আইনগত সংজ্ঞা সব মিলিয়ে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংঘাত, বাস্তুচ্যুতি এবং নিরাপদ আবাসনের অভাব নির্যাতনের শিকার নারীদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
ইউএনওডিসি-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জন ব্র্যান্ডোলিনো বলেন, ‘বিশ্বের বহু নারী ও কিশোরীর জন্য তাদের নিজ ঘরই সবচেয়ে বিপজ্জনক। এ পরিস্থিতিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
ইউএন উইমেনের নীতি বিভাগের পরিচালক সারা হেনড্রিকস বলেন, ‘ফেমিসাইড প্রায়ই এক ধরনের সহিংসতার ধারাবাহিকতা’র অংশ, যা নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ, হয়রানি বা অনলাইন নির্যাতন দিয়ে শুরু হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নির্যাতন অনলাইনে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি অফলাইনে ছড়িয়ে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সঙ্গী বা পরিবারের হাতে নারী হত্যার সর্বোচ্চ হার রেকর্ড হয়েছে আফ্রিকায়, এরপর আমেরিকা, ওশেনিয়া, এশিয়া এবং সর্বনিম্ন ইউরোপে।
ইউএন উইমেন জানায়, সহিংসতার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে স্কুল, কর্মক্ষেত্র, জনসেবা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। পাশাপাশি নারীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, আইনি সহায়তা ও বিশেষায়িত সহায়তা সেবায় সরকারি বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।