Wednesday 26 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রংপুরের সাবেক উপ-কমিশনার শিবলীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:২৯

রংপুর পুলিশের সাবেক উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোহাম্মদ শিবলী কায়সার। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে মারধরের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

এছাড়া পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি রিপোর্টে থানায় কর্মরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা, বাবা-ছেলেকে জোর করে থানায় নিয়ে যাওয়া এবং মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগগুলোও যাচাইকৃত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে প্রতিবেশীর চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে তার অফিসে এক ব্যক্তি গেলে তাকে গালাগালি ও মারধরের হুমকির অভিযোগ আংশিকভাবে সত্য বলে বিবেচিত হয়েছে প্রতিবেদনে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর কোতোয়ালি থানায়। ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার পক্ষে তার ব্যবস্থাপক মো. পলাশ হাসান চাঁদাবাজির অভিযোগে শিবলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার এফআইআর দাখিল করতে যান। এফআইআরে শিবলীর নাম দেখে তিনি থানায় যান এবং পলাশকে মারধর শুরু করেন। মারধরের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল মৌসুমী আক্তারের রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেন। একইসঙ্গে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে উপকমিশনারের কার্যালয়ে যাওয়া বাবা মো. মাহবুব আহমেদ ও ছেলে হাবিবুর রহমানকে গালাগালি, পুলিশ সদস্যকে লাঠি আনার নির্দেশ ও তাদের মারতে উদ্যত হওয়ার অভিযোগের আংশিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি।

বিজ্ঞাপন

এই ঘটনায় থানায় একটি অভ্যন্তরীণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও প্রাথমিকভাবে শিবলীকে আসামি করা হয়নি। পরবর্তীকালে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২০ জুলাই পুলিশ সদর দফতরকে ছয়টি অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেয়, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি দায়িত্বে অবহেলা, বিভাগীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন এবং অসদাচরণ। গত ২৫ জুলাই তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তদন্তকারী কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। ঘটনার পরপরই গত ১৫ মার্চ শিবলীকে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে সদর দফতরে যুক্ত করা হয়।

তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর শিবলীর রাজনৈতিক সংযোগ এবং অপপ্রচারের অভিযোগও উঠে এসেছে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। সরকার পতনের (৫ আগস্ট) পর নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগেও পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া এবং একজন পুলিশ সুপারকে মারধরের জন্য দুইবার লঘুদণ্ড পেয়েছেন।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি শিবলী বিভাগীয় মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য রংপুর-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সামু রাজি না হওয়ায় ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে তাকে মানহানি করার চেষ্টা করছেন। এ প্রতিবেদনে সামুকে ফ্যাসিস্ট ওবায়দুল কাদেরকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া এবং তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে সামু অভিযোগ করেন।
সামু বলেন, ‘এসব মিথ্যা, আমি ২০২২ সালে জমি বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেছি। আমি খোঁজ নিয়েছি; গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন কোনো প্রতিবেদন দেয়নি।’

শিবলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আমার জানা নেই। গোয়েন্দা প্রতিবেদন আমি পুলিশ সুপার হিসেবে ডিউটি পালন করে আইজিপিকে দিয়েছিলাম। প্রত্যেক পুলিশ সুপারের এ অধিকার আছে।’

এদিকে, চাঁদাবাজির মূল অভিযোগকারী লিপি খান ভরসাকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও প্রকাশ করে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো শিবলীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় পুলিশ প্রশাসনে অস্থিরতা বাড়িয়েছে এবং এ ঘটনা পুলিশের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।