লালমনিরহাট: বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক বাউল শিল্পীদের দীর্ঘ পথচলা উদযাপিত হলো লালমনিরহাটে। গত রোববার দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা ও বাউল গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘গ্রাম বাংলা বাউল শিল্পীগোষ্ঠী’।
গত রোববার রাত ৯টার দিকে শুদ্ধ সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে লালমনিরহাট জেলা শহরের নয়ারহাট এলাকায় ওই আলোচনা সভা ও বাউল গানের অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বাউল চান মিয়ার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, পাঁচবার নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. আব্দুস ছালাম। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মো. খলিলুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বাউল গানের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার সুপ্রাচীন বাউল কল্পকথা এবং জীবনদর্শনের গভীরতা তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বাউল গানের গুরুত্ব ও এর দর্শন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
আলোচনার সভার প্রধান অতিথি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম বলেন, বাউল গান কেবল একটি শিল্পরূপ নয়, এটি হাজার বছরের বাঙালির লোকায়ত জীবনবোধের প্রতিচ্ছবি। বাউল সাধকরা তাদের গানের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতাবাদী এক বার্তা প্রচার করে এসেছেন। তাদের গানগুলো মূলত আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা, দেহতত্ত্ব, সৃষ্টিরহস্য এবং গুরু-শিষ্যের পরম্পরা নিয়ে গঠিত। বাউল কল্পকথার মূল উপজীব্য হলো, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন এবং সাধনার মাধ্যমে সেই ‘মনের মানুষ’কে খুঁজে বের করাই জীবনের লক্ষ্য। এই দর্শনই গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফেরে এবং বাউল শিল্পীরা তাদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এই অমূল্য লোকঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার পর আগামী বছরে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জেলার মাটি ও মানুষের নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে নির্বাচিত করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-জেলা কালচারাল অফিসার মো. হামিদুর রহমান, সংস্কৃতিমনা মো. সামছুদ্দোহা বাবু, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ঠিকাদার মিজানুর রহমান মিজান, লালমনিরহাট আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. লিয়াকত আলী সরকার, বাংলাদেশ নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশনের লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি মো. আল আমিন, গ্রাম বাংলা বাউল শিল্পীগোষ্ঠীর লালমনিরহাট সভাপতি কবি সাধক পাগলা জাহাঙ্গীর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মাহ আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানেবক্তারা বলেন, বাউল কল্পকথা ও লোকসংগীত বাংলার নিজস্ব সম্পদ। আধুনিকতার ভিড়ে এই ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় বাউল গানের অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিত শিল্পীগোষ্ঠী তাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার মাধ্যমে শ্রোতাদের এক অন্য জগতে নিয়ে যান। বাউল গানের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত হন। গ্রাম বাংলা বাউল শিল্পীগোষ্ঠীর এই ১০ বছরের পথচলা লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়।