রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদ থেকে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে প্রথম সিইসি প্রফেসর ফেরদৌস রহমানের পদত্যাগের পর এই ঘটনা নির্বাচনকে নতুন করে অনিশ্চিত করে তুলেছে, যার ফলে ক্যাম্পাসে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে ড. শাহজামান বলেন, ‘পারিবারিক কারণে দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়ায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠনের পর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০ নভেম্বর পুনঃতফসিল প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচনকে এগিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু পদত্যাগপত্র রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদের কাছে জমা দেওয়ার পর কমিশনের কাজকর্ম থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ নিশ্চিত করে বলেন, ‘পদত্যাগপত্র আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং বিষয়টি উপাচার্যের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। নতুন সিইসি নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে, যাতে ২৪ ডিসেম্বরের ভোটগ্রহণের তফসিল অটুট থাকে।’
তবে এর মধ্যে কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা-মো. আমির শরীফ, মো. মাসুদ রানা, ড. প্রদীপ কুমার সরকার, ড. মোহসিনা আহসান এবং মো. হাসান আলী দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাবেন বলে জানানো হয়েছে।
এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রধান কমিশনারের পদত্যাগ ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, যা প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর প্রথমবারের এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। গত ৫ নভেম্বর বিজনেস অনুষদের ডিন ড. ফেরদৌস রহমানের পদত্যাগের পর ড. শাহজামান দায়িত্ব নিলেও, এখন আবার এই ফাঁকা পদ নির্বাচনের রোডম্যাপকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
শিক্ষার্থী রাহাত হোসেন বলেন, ‘আমরণ অনশন থেকে শুরু করে দীর্ঘ আন্দোলনের পর যে নির্বাচন এসেছে, তা এখন অনিশ্চিত। প্রশাসন দ্রুত নতুন কমিশনার নিয়োগ না করলে আমরা আবার কর্মসূচি জোরদার করব।’
এদিকে ক্যাম্পাসে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘‘পদত্যাগের পেছনে রাজনৈতিক চাপের গুঞ্জন শুনছি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সিমিলার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো ছাত্র রাজনীতির প্রসারে বাধা সৃষ্টি করছে। এটা নির্বাচনকে ‘বানচাল’ করার চক্রান্ত মনে হচ্ছে। আমরা সতর্ক থাকব।”
উপাচার্য ড. শওকাত আলীর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এখনো কোনো অফিসিয়াল বক্তব্য দেননি। তবে সূত্র জানায়, নতুন সিইসি নিয়োগের জন্য শিক্ষকদের মধ্যে থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই ঘটনা দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে নির্বাচনি কমিশনের অস্থিরতা ছাত্রআন্দোলনকে নতুন করে জাগ্রত করছে।
শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, ‘এই অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ২৪ ডিসেম্বরের ভোট অটুট থাকবে, যা বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।’