ঢাকা: দেশের আর্থিক সেবার কাঠামো দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগোচ্ছেও বেশিরভাগ গ্রাহক এখনো এ সেবার বাইরে রয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের মোট আর্থিক সেবাগ্রহীতার ৭৫ শতাংশই ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত। মাত্র এক ধরনের ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশে। গবেষণা অনুসারে বর্তমানে সব ধরনের আর্থিক সেবার আওতায় গ্রাহকসংখ্যা ৪২ কোটির মতো।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিআইবিএম আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘রিটেইল ব্যাংকিংয়ে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রভাব ও ব্যাংকিং পণ্য উদ্ভাবন’ শীর্ষক গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। চারজন শিক্ষক ও দুই ব্যাংক কর্মকর্তাসহ গবেষণা দল ৩২টি ব্যাংক এবং ৩২০ জন গ্রাহককে নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করেন।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর ফারুক এম আহমেদ ও সুপারনিউমারারি অধ্যাপক আলী হোসেন প্রধানিয়া।
গবেষণায় দেখা যায়, গত দশ বছরে আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত ডেলিভারি চ্যানেলের সংখ্যা ৬ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখে। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। ব্যাংকগুলো ডিজিটাল রূপান্তরে বার্ষিক বাজেটের গড়ে ১২ শতাংশ ব্যয় করে থাকে। দেশের ৭১ শতাংশের বেশি গ্রাহক স্মার্টফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নিলেও বাকি অংশ প্রযুক্তি-অপ্রতুলতার কারণে পিছিয়ে আছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ও বিআইবিএমের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান আলম জানান, গত ২০–২৫ বছরে ব্যাংক খাতের ডিজিটাল রূপান্তরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে। প্রতিবছর ডিজিটাল চ্যানেল তৈরিতে ব্যয় হয় গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
গবেষণায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে দেখা যায়—ডিজিটাল পণ্য ও অবকাঠামোর সফলতার শীর্ষে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ, আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এটিএম সেবা।
এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর ফারুক এম আহমেদ বলেন, ডিজিটালাইজেশনকে অনেক সময় বাড়তি খরচ হিসেবে দেখা হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। তিনি পরামর্শ দেন, ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদে অন্তত একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রাখাকে বাধ্যতামূলক করা উচিত।
গবেষণা উপস্থাপনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিজিটাল ফাঁরাক কমাতে এবং সেবার মান বাড়াতে গ্রাহকদের প্রযুক্তি অভিগম্যতা বাড়ানো জরুরি। অন্যথায় আর্থিক সেবার আধুনিকায়নে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া কঠিন হবে।