মঙ্গল কামনায় বড়দিন উদযাপন
২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ১১:১১
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
রাজধানীরসহ সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। পাপমুক্তি, মঙ্গল ও করুণা কামনা এবং বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে দিনটি। সকাল ৭টায় রাজধানীর ফার্মগেটের তেজগাঁও এলাকার হলি রোজারিও চার্চে বড়দিন উপলক্ষে প্রার্থনা শুরু হয়।।
প্রার্থনার শুরুতেই মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধি এবং জগতের সব মানুষের মঙ্গল কামনা করা হয়।
প্রার্থনায় ফাদার বলেন, এই রাতে মাতা মেরির গর্ভে এসেছিলেন খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। তিনি ঐশীজাত। তার মধ্যে রয়েছে সৃষ্টিকর্তার রূপ।
তিনি বলেন, মানবতার সেবার সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
এসময় তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করেন।
গির্জায় বড়দিনের কাজে নিয়োজিত এক কর্মচারী জানান, রোববার রাত ১০টা থেকেই বড়দিনের সকল আচার মেনে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বড়দিন উৎসব উপলক্ষে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সেজেছে হলি রোজারিও চার্চ। সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি, রয়েছে প্রতীকী গোশালা।
রাজধানী তেজগাঁর অন্যতম বড় এই ক্যাথলিক চার্চটি ১৬৭৭ সালে পর্তুগিজরা প্রতিষ্ঠা করেছিল। মোট দু’টো গির্জা আছে এখানে, একটি নতুন অন্যটি পুরাতন।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবেন। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। আবহমানকাল ধরে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরো সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী এ পুণ্যদিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঔদার্য এবং মানবতার মহান ব্রতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি আশা করেন, বড়দিন দেশের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরো সুদৃঢ় করবে।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক স্বপন রোজারিও জানিয়েছেন, আজ সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে । দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসবে। রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রচুর জরি লাগিয়ে গির্জার ভেতর সুসজ্জিত করা হয়েছে। ভেতরে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি।
বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও এবং মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বড় দিন ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য আনন্দ বার্তা বয়ে আসুক এই কামনা করেছেন নেতারা।
বড়দিন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাও। ফার্মগেটের হলি রোজারি চার্চের ফাদার মিন্টু এল পালমা জানান, বড়দিন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি তিন/চার সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়। আমাদের দু’ধরনের প্রস্তুতি থাকে। একটি আধ্যাত্মিক ও অন্যটি বাহ্যিক। আমরা আধ্যাত্মিকটিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর বাহ্যিকটাও যথাযথ গুরুত্ব পায়। আজ রয়েছে চারটি প্রার্থনা। এরইমধ্যে সকালে দুটো প্রার্থনা শেষ হয়েছে।
কাকরাইল চার্চের ফাদার খোকন ভিনসেন্ট গোমেজ জানান, বড়দিন উপলক্ষে আমাদের এখানে আজ সকাল ৭টায় একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে আমরা আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। আমরা প্রার্থনা করে থাকি মন্দ দূর করে মুক্তিদাতা যিশুকে হৃদয় থেকে বরণ করে নেওয়ার। এ অনুষ্ঠানটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকছে না। শুধুমাত্র খ্রিষ্ট ধর্মাবলীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সারাবাংলা/ এসও/ এমএইচটি