Thursday 27 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকার ব্যবসায়ী মহলকে কেয়ার করছে না: বিসিআই সভাপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:২৮

বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ – (ফাইল ছবি : সংগৃহীত)

ঢাকা: দেশের অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। এমন কী এ নিয়ে আমরা চিৎকার করলেও সরকার শুনছে না। তারা ব্যবসায়ী মহলের কেয়ার করছে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে আরও দুর্দিন আশার শঙ্কা রয়েছ।

বৃহস্পতিবার (২৭ ন‌ভেম্বর) রাজধানীর বনানীর ‘পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (পিআরআই) কার্যালয়ে ‘মাসিক ম্যাক্রো অর্থনৈতিক ইনসাইটস’ শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই’র চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়েও সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। ২০২২ সালের পর থেকেই জ্বালানির সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সবাই ঢাকায় এসে ‘টেসলা’ (অটোরিকশা) চালাচ্ছে। এই শহরের জনসংখ্যা এখন সাড়ে তিন কোটি হয়ে গেছে। তা নিয়ে কারো সিরিয়াসনেস দেখা যাচ্ছে না। সবাই দায়সার কাজ করে যাচ্ছে। এর দায় নিতে হবে। একটা পথ বের করতে হবে।

উচ্চ খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গ টেনে আনোয়ার উল আলম বলেন, ১৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ থাকার সময় আইএমএফ বাংলাদেশকে মধ্যম মানের ঝুঁকিপূর্ণ বলেছিল। এখন তা ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর প্রশ্ন, আইএমএফ এখন বাংলাদেশের খেলাপি ঋণকে কোন মানের আখ্যা দেবে। ঋণের ব্যয় আরও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রধান শর্ত। একই সঙ্গে শক্তিশালী নীতিকাঠামো, জ্বালানি খাতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি বলেন, দেমে বিনিয়োগ পরিবেশ এখনো নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে পার করছে। কোন ব্যবসা শুরু করতে গেলে পদে পদে ভোগান্তি। বিদেশি বিনিয়োগ নীতিমালা এখনো ব্যবসা বান্ধব হয় নি। কেননা, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দরকার।

পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার বলেন, অর্থনীতির গতি কমলেও স্থিতিশীলতা এসেছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে আরও উদার নীতি গ্রহণ করতে হবে। পাল্টা শুল্কের প্রভাবে রফতানি কিছুটা কমলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এখনো ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। সেটা নিয়ে স্বস্তির ঢেকুর গেলা যাবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় আনুমানিক ৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন টাকার অনাদায়ী ঋণের বোঝা সার্বিক অর্থনীতিতে গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। এই বিশাল বোঝার কারণে ব্যাংকগুলোকে উচ্চ সুদহার বজায় রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিতে হয়। এতে উৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যায়। যা ‘বিষাক্ত চক্র’ তথা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, নিম্ন বিনিয়োগ ও দুর্বল প্রবৃদ্ধিকে উস্কে দেয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আশিকুর রহমান বলেন, কঠিন পদক্ষেপ না নিলে উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে মধ্যমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি হবে। এতে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনা সংকুচিত হতে পারে। কীভাবে এই খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা করা হবে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। আর অর্থনীতির সার্বিক বিশ্লেষণের আভাস ও নীতি কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, অনেক দেশ আন্তর্জাতিক স্ট্রেসড অ্যাসেট ফান্ড (এসএএফ)–এর মতো ব্যবস্থা চালু করেছে। বাংলাদেশে সরকারি অংশীদারিত্ব ও গ্যারান্টি থাকলে ব্যাংকগুলো দ্রুত তাদের অনাদায়ী ঋণ ব্যালান্স শিট থেকে সরাতে সক্ষম হবে। অনাদায়ী ঋণের প্রকৃত মূল্যায়ন অত্যন্ত জটিল। কারণ অধিকাংশ খেলাপির বাস্তব বাজারমূল্য অজানা। এর ফলে সঠিক পুনর্গঠন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

বিল্ডস এর গবেষক ড. ওয়াটসল বিন সাদান বলেন, সৎ করদাতারা সর্বাধিক চাপের মুখে পড়ছেন। করনীতির ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে ৮৫ শতাংশ অর্থনীতি অনানুষ্ঠানিক খাতে থেকে যাবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ড. একেএম আবিদুর রহমান, বিজিএমইএ প্রতিনিধি ইয়াকুব বিন ইসলাম প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর