ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর মধ্যে চলমান সমঝোতা স্মারকের আওতায় ডিজিটাল মাধ্যমে দুর্নীতির বিস্তাররোধ এবং এর অদৃশ্য জাল উন্মোচনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পেশাগত সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল ফরেনসিক, ফরেনসিক অ্যানালাইসিস, ফরেনসিক একাউন্টিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি’ বিষয়ক দুই দিনব্যাপী বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করেছে টিআইবি।
২৬ ও ২৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ টিআইবির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণে ঢাকা থেকে ২৪ জন এবং ঢাকার বাইরে থেকে ১৬ জনসহ দুদকের বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০ জন তদন্ত কর্মকর্তা অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) প্রশিক্ষণের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআইবি সবসময় দুদকের সহযোগী শক্তি হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘দুর্নীতি দমনে টিআইবি দুদকের অন্যতম শক্তিশালী মিত্র। টিআইবি যত ভালভাবে নিজেদের কাজ করতে পারবে, দুদকের কাজ তত সহজ হবে।’ দুদক ও টিআইবির যৌথ উদ্যোগের পরিধি আরো বিস্তৃত করার বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুদকের পক্ষ থেকে এ ধরণের উদ্যোগ বেগবান করতে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া ও সহায়তা দেওয়া হবে।’
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাজের গুরুত্ব তুলে ধরে সমাপনী অধিবেশনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রশিক্ষণার্থীরা এই কর্মশালা থেকে লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে দায়িত্ব পালনে অধিকতর পেশাগত উৎকর্ষের প্রমাণ রাখতে পারবেন, এই প্রত্যাশা করি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে দুদকের কার্যক্রম আগের চেয়ে গতিশীল এবং সক্রিয় হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। তবে আপনাদের কাজের মধ্য দিয়ে দুদকের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। টিআইবি সবসময় শক্তিশালী ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন দেখতে চায়। তাই দুদকের সক্ষমতা বাড়াতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা চলমান থাকবে। পাশাপাশি প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে, টিআইবি দুদকের গঠনমূলক সমালোচনাও করবে। সেই সমালোচনা ইতিবাচকভাবেই দেখতে হবে; কারণ আপনার সমালোচক বাস্তবে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।’
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি- যা মোকাবিলায় রাষ্ট্র আপনাদের দায়িত্ব দিয়েছে। এ নিয়ে আপনাদের অসাধারণ গর্ববোধ, দায়িত্বপরায়ণতা ও আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত। এমন মূল্যবোধের সাথে সততা ও পেশাগত উৎকর্ষের সংমিশ্রণ করতে পারলে আপনারা সত্যিকার অর্থেই দুদকের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।’ উদ্বোধনী ও সমাপনী অধিবেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
বিশেষায়িত এই প্রশিক্ষণের প্রথম দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক জনাব আল-আমিন ফরেনসিক একাউন্টিং বিষয়ে দিনব্যাপী সেশন পরিচালনা করেন। তিনি ফরেনসিক হিসাবরক্ষণের খুঁটিনাটি, আর্থিক জালিয়াতি সনাক্তকরণ পদ্ধতি, তদন্ত কৌশল এবং পুঁজিবাজারে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের উদাহরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
শেষ দিনে ডিজিটাল স্পেস, ডিজিটাল কারেন্সি, ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেন মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এরশাদুল করিম। এ সময় তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সির নানা আইনি দিক নিয়েও আলোচনা করেন। ওপেন সোর্স ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ চিহ্নিত করার কৌশল এবং ওপেন ডেটার বিভিন্ন তথ্যভাণ্ডার বিষয়ে সর্বশেষ সেশন পরিচালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন দুদক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। এসময় প্রশিক্ষণ বিষয়ে নিজেদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা বিনিময় করে, টিআইবি ও দুদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাবৃন্দ। ভবিষ্যতে পেশাগত কাজে এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে আসবে বলেও জানান তারা।