Thursday 27 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হঠাৎ কেন শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও পুলিশ?

মেহেদী হাসান স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ নভেম্বর ২০২৫ ০০:০৭ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ০০:০৯

হঠাৎ কেন শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও পুলিশ? ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: মূলত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পথ ধরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গতবছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের পতন ঘটে। এর পর ছাত্ররা রাজপথে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় থাকলেও পুলিশ তাদের ওপর খুব একটি চড়াও হয়নি। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য তারা এমনিতেই ব্যাকফুটে চলে যায়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, এমনকি পুলিশের মনোবলও। সেই অবস্থা থেকে তাদের ফেরানোর জন্য লোগো, পোশাক থেকে শুরু করে মনোবল চাঙ্গা ও মানসিকতা পরিবর্তনেরও উদ্যোগ নেওয়া।

বিজ্ঞাপন

৫ আগস্টের পর নানান গোষ্ঠী ও শ্রেণি বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাস্তায় নামে। শুরু করে আন্দোলন। এ সময় কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হতে দেখা যায়নি পুলিশকে। এমনকি সড়কে ও খুঁটিতে প্রতীকী লাঠিপেটা করে ভয় দেখিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের। যা ওই সময় প্রশংসা কুরিয়েছে সব মহলে। কিন্তু সেই চিত্র বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা গেছে পুলিশের আগের চেহারা।

কিছুদিন আগে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দাবি আদায়ে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মুখ চেপে ধরেন। যে ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তার পর গত ১৭ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বুলডোজার নিয়ে প্রবেশ করতে উদ্যত হয়। কিন্তু তাতে বাধা দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এমনকি ছাত্রদের ওপর টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।

এরপর মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে গণসমাবেশে করে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের যমুনা অভিমুখী মিছিলে পুলিশের চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এমনকি তাদের ব্যাপক লাঠিপেটা করা হয়। এতে জখমও হয় বেশকয়েকজন শিক্ষার্থী। ওইদিন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) সাবেক শিক্ষার্থী শাহিনুর ইসলাম শুভনের মাথায় ১০টি সেলাইও দেওয়া হয়ে।

এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইসমাইল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত ৩০ দিন রাস্তায় যাইনি। মানুষ জানতেও পারেনি আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা কখনো যমুনা অভিমুখে যেতে চাইনি। পুলিশ গত পাঁচদিনের প্রত্যেকদিনই সচিবালয়ে নিয়ে গেছে আমাদের প্রতিনিধিকে। একটা দিনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়নি। বরং, বসিয়ে রেখে বিকেল পাঁচটা বাজলেই বলেছে, অফিস টাইম শেষ, আগামীকাল আসেন।’

তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে আসিফ স্যার জানালেন, এটা আর হবে না। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া কেউ এটা কনভিন্স করতে পারবেন না। ফলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো অল্টারনেটিভ ছিল না। এর পরই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যমুনায় যাওয়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু পুলিশ বাধা দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তারা অমানবিক অত্যাচার করেছে। তারা ৫ আগস্টের আগের মতো আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখলে এটা স্পষ্ট বোঝা যাবে।’

শিক্ষার্থী জিহাদ উল্লাহ নিলয় সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শাহবাগ থানার সামনের সড়কে অবস্থান করছিলাম। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। হঠাৎ পেছন দিক থেকে গাড়ি নিয়ে এসে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে। এর পর সামনে থেকে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ- সবমিলিয়ে আমাদের দুই দিক থেকে চেপে ধরে। এতে শিক্ষার্থীরা মুহূর্তেই দিশেহারা হয়ে পড়ে।’

এসব বিষয়ে ও পুলিশের হঠাৎ চড়াও হওয়া নিয়ে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সঙ্গে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তাদের বুঝিয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা খুবই কম বল প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। এখানে কোনো অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের যে আইন ও বিধি-বিধান আছে, তা মেনেই শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করেছি।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রশ্নে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া-কেন্দ্রিক আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী প্রয়োজন মনে করলে বল প্রয়োগ তো করবেই। এটা আইনের মধ্যেই আছে। কিন্তু আমরা পুলিশের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে কিংবা পরস্পর সংবেদনশীল জায়গা থেকে যেভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেদিকে গুরুত্বারোপ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যেমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবে, তেমন আন্দোলনকারীরা তাদের আবেদন জানাবে সেটিও ঠিক। দুই পক্ষকেই যার যার জায়গা থেকে ছাড় দিতে হবে। তবে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান বা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি দেখলে পুলিশের মুখোমুখি হতে হয় না। তারা নীরব থেকে পুলিশকে সামনে ঠেলে বলির পাঠা বানাচ্ছে। এতে আসলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে।’

এদিকে ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনসহ সময় বাড়ানোর দাবিতে টানা আন্দোলনের পর অবশেষে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন।

এ সময় শিক্ষার্থী সাইফ মুরাদ বলেন, গতকাল পুলিশের হামলায় ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কারও মাথায় ১০ টিরও বেশি সেলাই লেগেছে। আহত অবস্থায় পরীক্ষায় বসা অসম্ভব। দেশে এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যেখানে পেশিশক্তির ওপর ভিত্তি করে বহু অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হয়। অথচ, আমাদের দাবি ছিল শুধু সময়।

সারাবাংলা/এমএইচ/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

খুলনায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
২৭ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৪০

আরো

মেহেদী হাসান - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর