Friday 28 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১১ বছরের অপেক্ষার অবসান
আলোর মুখ দেখল রংপুর, গঠন হলো ‘রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’

রাব্বী হাসান সবুজ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০১

রংপুর শহর। ছবি: সারাবাংলা

রংপুর: দীর্ঘ ১১ বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে রংপুরবাসীর বহু প্রত্যাশিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ‘রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ-২০২৫’ এর সরকারি গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করল রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রউক)। উত্তরবঙ্গের ১০ লাখ মানুষের দীর্ঘ দাবির এই সফল পরিণতি রংপুরের নগরায়নে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করল।

২০১৪ সালের ৮ জুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কমিটিতে নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর ১১ বছর ধরে ফাইলে আটকে ছিল এই কর্তৃপক্ষ। এখন গেজেট প্রকাশের পর আইনি কাঠামো পেয়ে দ্রুতই চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকবে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকা এবং গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও মহানগর সংলগ্ন ইউনিয়নসমূহ।

‘অপরিকল্পিত শহর’ বদলে ‘সমন্বিত ও সবুজ নগরী’

কর্তৃপক্ষের প্রধান লক্ষ্য ও কার্যপরিধি বিষয়ে প্রকাশিত গেজেটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রউক) গঠনের মূল উদ্দেশ্য-

  • অপরিকল্পিত নগরায়ন নিয়ন্ত্রণ

  • প্রকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা

  • ভূমিকম্প, বন্যা ও জলাবদ্ধতাসহ দুর্যোগসহনশীল নগর ব্যবস্থাপনা

  • তথ্য-প্রযুক্তি, পর্যটন ও বাণিজ্যিক শিল্পের বিকাশ

  • সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা

রংপুরবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল

রংপুর জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘এটা রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ। ২০১৪ সাল থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সেই আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ কার্যকর হোক। বর্তমানে রংপুর একটি অপরিকল্পিত, দখলদার আর দূষণে ভরা নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে ফুটপাত—সবই দখলে। বহুতল ভবন উঠছে কোনো নিয়মনীতি না মেনে। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ কার্যকর হলে রংপুর একটি সবুজ, সুশৃঙ্খল ও বাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তরিত হবে।’

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, ‘এটি রংপুরের অর্থনীতি ও বিনিয়োগের জন্য ঐতিহাসিক দিন। পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান হলে শিল্প-কারখানা, আইটি পার্ক ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগ বাড়বে।’

রংপুর কেন এতদিন পিছিয়ে ছিল?

দেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও গাজীপুরের পর রংপুরই হচ্ছে দশম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রংপুরের জন্য ২০১৪ সালে অনুমোদনের পরও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতায় ফাইল আটকে ছিল।

প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রংপুরের জন্য ৫০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন, যাতে জলাশয় সংরক্ষণ, ভূমিকম্পসহিষ্ণু ভবন, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সবুজায়ন নিশ্চিত করা যায়।

রংপুরবাসীর প্রত্যাশা

নগরবাসী এখন শুধু প্রজ্ঞাপনে নয়, দ্রুত বাস্তবায়ন চান। সুশীল সমাজের নেতারা বলছেন, ‘গেজেট হওয়ার পর আর দেরি নয়। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কার্যালয় চালু এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন শুরু হোক।’ অনেকে আশা করছেন, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কার্যকর হলে অপরিকল্পিত বহুতল ভবনের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে, শহরের ফুসফুস খ্যাত জলাশয়গুলো রক্ষা পাবে এবং রংপুর হয়ে উঠবে উত্তরবঙ্গের প্রথম সত্যিকারের ‘পরিকল্পিত ও সবুজ নগরী’।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর