Friday 28 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ, কাঁদছেন ভারতের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা

সারাবাংলা ডেস্ক
২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩১ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৪৪

পাশাপাশি সৌদি আরবও ভারত থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। এ দুই দেশ এখন পাকিস্তান ও চীন থেকে পেঁয়াজ নিচ্ছে, ফলে ভারতের বাজার চাপে পড়েছে। ইকোনোমিক টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতির জন্য ভারতের নিজের সিদ্ধান্তগুলোই দায়ী।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ছিল প্রধান ক্রেতা, এখন তা নেই

একসময় ভারতের মোট পেঁয়াজ রফতানির এক-তৃতীয়াংশ যেত বাংলাদেশে। কিন্তু গত আট মাস ধরে বাংলাদেশ প্রায় কিছুই নেয়নি। অথচ বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনও ভারতের দামের তিনগুণ। পাশাপাশি সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছে না। ফলে ভারতের বহু পুরোনো বাজার একে একে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

বারবার রফতানি বন্ধের ভুল নীতি

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারত সরকার একের পর এক বিধিনিষেধ, রফতানি শুল্ক আরোপ, এমনকি পুরোপুরি রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগেও ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কয়েক মাসের জন্য রফতানি বন্ধ ছিল। ফলে যেসব দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল তারা বাধ্য হয়ে নতুন উৎস খুঁজে নেয় দেশটি। ২০২০ সালে ভারতকে বাংলাদেশ জানিয়েছিল—‘বারবার নীতি বদলে আমাদের বাজার অস্থিতিশীল করছে ভারত।’

বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা

এখন বাংলাদেশের সরকার স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষা এবং উৎপাদন বাড়াতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৭ দশমিক ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল, যা ভারতের মোট রপ্তানির ৪২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৫-২৬ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আমদানি কমার একটি কারণ, তবে রফতানিকারকেরা মনে করেন—এটি ভারতের নিজের নীতিগত ভুলের ফল।

ভারতীয় বীজেই বাড়ছে প্রতিবেশী দেশের উৎপাদন

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ আরও গুরুতর—ভারতের নিজস্ব বীজ বহু বছর ধরে অবৈধভাবে প্রতিবেশী দেশে চলে যাচ্ছে। সে বীজেই বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, এমনকি পাকিস্তান চাষ বাড়িয়ে আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে।

রফতানিকারকদের মতে, ভারতের ঘরোয়া দামের ওঠানামার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বারবার নীতি বদল করায় পুরোনো বাজারগুলো নতুন উৎস খুঁজে নেওয়া ছাড়া উপায় দেখেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বোর্ড অব ট্রেডের সদস্য পাশা প্যাটেল বলেন, ‘আমরা শুধু বাজার হারাইনি, তারা এখন ভারতীয় বীজ দিয়ে নিজেদের উৎপাদনও বাড়িয়ে তুলছে।’

পুরোনো বাজারে হারাচ্ছে ভারত

সৌদি আরব প্রায় এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। সরকার যখন কারণ জানতে চাইছে, তখন বলা হচ্ছে সৌদি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় রফতানিকারকদের আমদানি অনুমতি দিচ্ছে না। তাদের মতে, ইয়েমেন ও ইরান থেকে কমদামে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদনও যথেষ্ট।

এইচপিইএ সরকারের কাছে জানিয়েছে, ‘সৌদি বাজারে এখন সস্তায় পেঁয়াজ মিলছে ইয়েমেন ও ইরান থেকে। নিজেদের উৎপাদনও বাড়ছে।’ ট্রেডাররা বলছেন, ফিলিপাইনও ভারতীয় পেঁয়াজ কেনে তখনই, যখন চীনা সরবরাহ পাওয়া যায় না। ২০২০-২১ সালে ভারত সৌদি আরবে ৫৭ হাজার টন পেঁয়াজ রফতানি করেছিল। এরপর প্রতিবছর কমতে কমতে ২০২৫-২৬ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ২২৩ টনে।

দামের কারণে প্রভাব কমছে ভারতের

ভারতের রপ্তানিকারক অজিত শাহ বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজের কোয়ালিটির জন্য আমরা ভালো দাম আদায় করতে পারতাম। কিন্তু রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ছিলাম না। তখন আমাদের ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজেছে। এখন ক্রেতারা আর কোয়ালিটি দেখে না। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলো কত দামে পেঁয়াজ দিচ্ছে, তারা সেটি দেখে।’