রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সবগুলো (১৭টি) আবাসিক হলে ঝুলছে মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিভিন্ন হল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অগ্নিকাণ্ডের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে এগুলো অকার্যকর থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়েছেন মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো এখনো কার্যকর রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে প্রতিটি আবাসিক হলে একাধিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে যন্ত্রগুলোর মেয়াদ গত ২ অক্টোবরে শেষ হলেও সেগুলো রিফিল করার জন্য এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। এদিকে, প্রশাসন ভবনে লাগানো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলছেন—আবাসিক হলের হাজারো শিক্ষার্থীর জীবনের মূল্য কি নেই?
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ১৭টি হলে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী এসব হল ভবনে বসবাস করেন। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার এমন অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— প্রশাসন ভবনকে সুরক্ষার আওতায় রাখলেও, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে যেন কোনো ভাবনাই নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিবর্তন করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান জানান, ‘হলে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো তুলনামূলক পুরাতন এবং এগুলোর গায়ে কোনো মেয়াদ বা উৎপাদনের তারিখ নেই। ফলে জরুরি সময়ে এগুলো কার্যকর হবে কিনা—এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর সন্দেহ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হলে অনেক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি ভূমিকম্পের ঘটনাতেও শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।’
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী মাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত মাসেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যদি কখনো আগুন লাগে, এগুলো দিয়ে কাজ হবে না— এটা ভেবে ভয় লাগে। আমরা কি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলগুলোতে থাকব? হলগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। তাই দ্রুত রিফিল করা উচিত।’
এই বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড ভয়ংকর এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে এখনও ক্যাম্পাসে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। অ্যাকাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো প্রয়োজন পড়েনি, তবে অনেক যন্ত্রের মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ।’
তিনি আরো জানান, ‘অগ্নি-নিরাপত্তা নিয়মিত মনিটরিং করা জরুরি এবং কমিটি থাকলে কার্যক্রম চালানো, না থাকলে নতুন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নজরদারি অপরিহার্য।’
হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে এ তথ্য আমার জানা নেই। তবে যদি যন্ত্রগুলোর সত্যিই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে খুব দ্রুতই সেগুলো পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মাদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে—এ তথ্য তার জানা নেই। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে হল প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’