Friday 28 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অজানা কারণে ১৭তম বিজেএসে বাদ গেলেন গোবিপ্রবির সাদিকুর

গোবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট
২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০০:০৮

গোবিপ্রবি আইন বিভাগের ৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান।

গোবিপ্রবি: বাংলাদেশের বিচার বিভাগে বিরল এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) চূড়ান্ত গেজেট। সংবিধান, দেশের আইন এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট উপেক্ষা করে ১৪ জন মেধাবী প্রার্থীর নাম বাদ দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দেশের আইন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে “ভুয়া রাজনৈতিক ট্যাগ” ব্যবহার করে নিয়োগ আটকে দিয়েছে।

জানা যায়, ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়ারি সার্ভিস কমিশন (বিজেএস) পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও গেজেটভুক্ত করা হয়নি ১৩তম বিজেএস ক্যাডারকে। দীর্ঘ প্রস্তুতি, কঠিন প্রতিযোগিতা ও কমিশনের সুপারিশে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশে তাদের নাম বাদ পড়ায় হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে এসব হবু বিচারক ও তাদের পরিবারের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ১ হাজার নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন মোট ১০২ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে।

প্রায় ১০ মাস অপেক্ষার পর গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় যে নিয়োগ-গেজেট প্রকাশ করে, সেখানে মাত্র ৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং বাকি ১৩ জনকে কোনো কারণ উল্লেখ না করেই বাদ দেওয়া হয়। এতে তাদের বিচারক হওয়ার স্বপ্ন গেজেটে আটকে গেল।

এই বাদ পড়া প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) আইন বিভাগের ৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান। তিনি ১৭তম বিজেএসে রোল ১০১৯, মেধাক্রম ৫৭তম হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু চূড়ান্ত গেজেটে তার নাম বাদ পড়ে।

বাদপড়া শিক্ষার্থীর বিষয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তিনি দলীয় রাজনীতি নয়, বরং ন্যায্য অধিকারের সংগ্রামে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আন্দোলন ছিল দলনিরপেক্ষ, কিন্তু অভিযোগ করা হয়েছে যে এসব যুক্তিহীনভাবে রাজনৈতিক ট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। অথচ সহপাঠী ও শিক্ষকরা এক বাক্যে জানিয়েছেন, সাদিকুর রহমান কখনোই কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না, তার নামে কোনো মামলা নেই এবং তার পরিবারও কোনো রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।

গেজেটে নিজের নাম বাদ পড়ার পর সাদিকুর রহমান বলেন,‘আমার পুরো অ্যাকাডেমিক জীবনে আমি কোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম না। আমার নামে কোনো ফৌজদারি মামলাও নেই। আমার পরিবারও কখনো কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ বা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়নি। গেজেট থেকে বাদ যাওয়া আমার এবং আমার পরিবারের জন্য সামাজিক হেনস্থার কারণ হবে। এর দায় নেবে কে? আমি বাকিদের সঙ্গেই ১লা ডিসেম্বর জয়েন করতে চাই।’

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে অবিচার, অসাংবিধানিক, অন্যায্য এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিরুদ্ধে বলে মন্তব্য করেছেন। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন—‘সাদিক ভাই অত্যন্ত ভালো মানুষ, ভালো শিক্ষক এবং ভালো গবেষক। তার মতো নির্দলীয়, চরিত্রবান, মেধাবী শিক্ষককে এমনভাবে বাদ দেওয়া লজ্জাজনক এবং বিচারব্যবস্থার জন্য অপমানজনক।’

আইনবিদরা মনে করছেন, বিচার বিভাগের প্রথম ধাপেই যদি স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা দ্রুত স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে ভুল রাজনৈতিক ট্যাগ বাতিল করে ১৪ জন প্রার্থীর নাম পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।