ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে টানা লোকসান, অনিয়ম ও খেলাপি ঋণে জর্জরিত ৯টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) শেষ পর্যন্ত অবসায়নের (লিকুইডেট) সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর আওতায় শিগগিরিই এ অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সম্প্রতি গভর্নর আহসান এইচ মনসুর-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অবসায়নের জন্য চিহ্নিত ৯টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- প্রাইম ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, পিপল’স লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
প্রসঙ্গত: এর আগে চলতি পঞ্জিকা বছরের গত জানুয়ারিতে অধিক পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন ২০টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বন্ধের জন্য তালিকাভুক্ত উল্লেখিত ৯টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকী ১১টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- বে লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, আইআইডিএফসি, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, সিভিসি ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স।
জানা যায়, সার্বিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় উল্লেখিত ২০ প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ইতোপূর্বে সবকটি এনবিএফআই-কে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বন্ধের জন্য তালিকাভুক্ত ৯ প্রতিষ্ঠানের জবাব ও কর্মপরিকল্পনা সন্তোষনক নয়- বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্রমতে, এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্বলতা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে ভালো অবস্থানে থাকা ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রতিও সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে। সে জন্য এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো বন্ধ করা হবে এবং এজন্য লিকুইডেটর নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো অবসায়নে সরকারি কোষাগার থেকে অন্তত ১০-১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এনবিএফআইগুলো-তে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র মতে, এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা, লিকুইডেটর নিয়োগ, সম্পদ বিক্রি এবং অর্থ দাবিদারদের মধ্যে বণ্টনের কাজ শুরু করবে।
সম্প্রতি গভর্নর জানিয়েছেন যে, আমানতকারীদের সুরক্ষা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ইতোমধ্যে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রদানের মৌখিক সম্মতি দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, তালিকাভুক্ত ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট আটকে থাকা আমানতের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আমানত ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা এবং ব্যাংক ও করপোরেট আমানত ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।
ব্যক্তিগত আমানতের মধ্যে- পিপলস লিজিং-এ ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা; আভিভা ফাইন্যান্স-এ ৮০৯ কোটি টাকা; ইন্টারন্যাশনাল লিজিং-এ ৬৪৫ কোটি টাকা; প্রাইম ফাইন্যান্স-এ ৩২৮ কোটি ও এফএএস ফাইন্যান্স-এ ১০৫ কোটি টাকা আটকে আছে।
প্রসঙ্গত: দেশে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত মার্চ শেষে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। এটি এনবিএফআইগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর মোট খেলাপি ঋণের ৫০ শতাংশের অধিক রয়েছে বন্ধের জন্য তালিকাভুক্ত ৯ প্রতিষ্ঠানে।