Thursday 04 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খেলাপি কমাতে মন্দ শ্রেণির ঋণে আংশিক অবলোপন সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংকের


৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:২৪ | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:৩৮

-ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত

ঢাকা: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত মান নির্ধারণে মন্দ শ্রেণির খেলাপি ঋণ আংশিক অবলোপন এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আংশিকভাবে অবলোপনকৃত ঋণের অবশিষ্ট অংশকে পুনঃতফসিল বা এক্সিট সুবিধা প্রদান করা যাবে।

বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) এ-সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রসঙ্গত: বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ হিসাব আংশিকভাবে অবলোপন করা যাবে না।

নতুন নির্দেশনায় উল্লেখিত বিধানটি রহিত করে বলা হয়েছে, ‘কিছু ক্ষেত্রে ঋণের একটি অংশ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ মর্মে প্রতীয়মান হলেও বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী আংশিক অবলোপনের সুযোগ না থাকায় এবং কোনো ঋণ হিসাব সম্পূর্ণ অবলোপনের জন্য পর্যাপ্ত সংস্থান সংরক্ষণে ব্যাংক সক্ষম না হওয়ায় ওই ঋণ অবলোপন করা সম্ভব হয় না। ফলে মন্দ ও ক্ষতিজনক ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনাদায়ী হওয়া সত্ত্বেও তা স্থিতিপত্রে প্রদর্শনের ফলে ব্যাংকের স্থিতিপত্রের আকার অনাবশ্যক স্ফীত হচ্ছে এবং ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত মান নির্ধারণ কর সম্ভব হচ্ছে না বিধায় ঋণ হিসাব আংশিক অবলোপনের আবশ্যিকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

‘ব্যাসেল নীতিমালা ও আইএফআরএস স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ঋণের আংশিক অবলোপন একটি স্বীকৃত পদ্ধতি’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ (ভারত, পকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা)সহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতির চর্চা করা হয়ে থাকে। এ প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণকরত অনাদায়ী ঋণ হিসাব ও আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন এ নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।’

মন্দ শ্রেণির খেলাপি ঋণ আংশিক অবলোপনে নতুন নির্দেশনার ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

# মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত এবং ভবিষ্যতে আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ এরূপ ঋণ হিসাব আংশিক অবলোপন করা যাবে। এক্ষেত্রে ঋণের যে অংশটুকু যোগ্য জামানত দ্বারা আবৃত, সে অংশটুকু আদায়যোগ্য মর্মে বিবেচিত হবে। ঋণের অবশিষ্ট অংশ এ নীতিমালার আওতায় অবলোপন করা যাবে;

# ব্যাংক প্রয়োজনে নিজে কিংবা পেশাদার জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা ঋণ হিসাবের বিপরীতে বন্ধকীকৃত জামানতের প্রকৃত বাজারমূল্য নির্ধারণ/নিরূপণ করতে পারবে;

# আংশিক অবলোপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবের আসল ও সুদের অংশের মধ্যে আরোপিত সুদের অংশ আগে অবলোপন করতে হবে;

# আংশিক অবলোপনের ক্ষেত্রে অবলোপনকালীন মোট অনারোপিত সুদের অংশকেও আনুপাতিক হারে পৃথক করে অলাদাভাবে হিসাবায়ন করতে হবে;

# ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে জামানত ব্যতীত আদায়কৃত অর্থ দ্বারা প্রথমে স্থিতিপত্র বহির্ভূত অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে পাওনা সমন্বয় করতে হবে। আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ মোট অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে পাওনার পরিমাণ বেশি হলে উদ্বৃত্ত অংশ দ্বারা সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবের স্থিতিপত্রে প্রদর্শিত বকেয়া ঋণস্থিতি সমন্বয় করতে হবে। তবে গ্রাহকের নিকট প্রাপ্য মোট বকেয়া পাওনা নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থিতিপত্রে প্রদর্শিত বকেয়া ঋণস্থিতি ও এর বিপরীতে অনারোপিত সুদ এবং অনাদায়ী অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে পাওনার সমষ্টিকে বিবেচনা করতে হবে;

# ঋণের আংশিক অবলোপনকৃত অংশ সমন্বয় পরবর্তীতে স্থিতিপত্রে প্রদর্শিত অংশ আদায়ের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবের অনুকূলে পুনঃতফসিল বা এক্সিট সুবিধা প্রদান করা যাবে।

উল্লেখ্য, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ইতোপূর্বে মন্দ শ্রেণির খেলাপি ঋণ অবলোপনে আরোপিত সময়সীমা তুলে নিয়েছে বাংলাদশ ব্যাংক। পূর্বের মূল নীতিমালা (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)  অনুযায়ী, যে সকল ঋণ হিসাব একাদিক্রমে দুই বছর মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত রয়েছে, সে সকল ঋণ হিসাব অবলোপন করার বিধান রাখা হয়েছিল। গত ১৯ অক্টোবর (২০২৫) জারি করা এক সংশোধিত সার্কুলারে উল্লেখিত সময়সীমা তুলে নেওয়া হয়।