Friday 05 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপির শরিক তিন নেতা মনোনয়নবঞ্চিত, চাপা ক্ষোভ

মো. মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৩১ | আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৮

অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আরও ৩৬ আসনে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ঘোষিত ৩৬ আসনের মধ্যে বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র তিন দলের তিন নেতাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের আসনে বিএনপির প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পরপরই দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক ও বর্তমানে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য কাজ করছিলেন গত ১৫ মাস। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে শরীক দলের ছয়জন নেতাকে সহায়তা করার জন্য বিএনপির সংশ্লিষ্ট জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠি পাওয়া এহসানুল হুদার আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। এবারও এই আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা করেছিলেন এনপিপি নেতাকর্মীরা। তবে এই আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে এনপিপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিগগিরই যার বহিঃপ্রকাশ হবে বলে জানা গেছে।

দলীয় নেতারা বলেন, এনপিপি দীর্ঘদিন বিএনপি জোটে ছিল। শেখ শওকত হোসেন নীলু বিএনপি জোট ছেড়ে গেলেও দল ভেঙে বিএনপি জোটে থাকেন ড. ফরহাদ। দুর্দিনে বিএনপির পাশে থাকলেও বিএনপি সুদিন পেয়ে এখন আমাদের ছুড়ে ফেলে দিল।

একইভাবে বিএনপি জোটের অন্যতম শরীক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তার বাড়িও এই জেলায়। তবে এবার তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের লেবার পার্টি দীর্ঘদিন যাবত ২০দলীয় জোটে ছিলেন। জোট ভেঙে যাওয়ার পরও তিনি বিএনপির সঙ্গেই ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিএনপি মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণার পর সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামের শরিকদের সঙ্গে স্পষ্ট বেঈমানী করেছে। বিগত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশ লেবার পার্টি বিএনপির নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ, সক্রিয় ও ত্যাগী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আজ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের শরিকদের পাশ কাটিয়ে এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা ইতিহাসের মীর জাফর চরিত্রের বিকৃত পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।

এদিকে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ২টায় নয়া পল্টন দলীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে ডা. ইরান জানান, ২০০৬ সাল থেকে বিগত দুই দশক ধরে বিএনপির ঘনিষ্ঠ শরিক হিসেবে সমমনা দল, ১৮ দলীয় জোট এবং পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোট, যুগপৎভাবে দায়িত্বশীল, ত্যাগী ও আদর্শিক ভূমিকা পালন করে আসছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে লেবার পার্টি রাজপথের যুগপৎ আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রাম এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি কর্মসূচিতে বিএনপির পাশে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিয়েছে। সেই পথচলার আনুষ্ঠানিকভাবে ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটি।

জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, বিএনপি বড় দল তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর ওপরে আমার কিছু বলার নেই। তবে আমি তাদের এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছি।

এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বর্তমানে ওমরাহ করতে মক্কা গেছেন। তার দলের যুগ্ম-মহাসচিব ফরিদ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৮ দলীয় জোট গঠনের পর ২০ দলীয় জোট হয়, আবার ২০ দলীয় জোট ভেঙে যাওয়ার পর যুগপৎ আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ সালের সকল আন্দোলনে বিএনপির পাশে ছিল এনপিপি। তখন বিএনপি আমাদের বার বার বলেছে, আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার একই সঙ্গে হবে। ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সব সময় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাদের কথা মতো আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। গত ২ ডিসেম্বর আমাদের চেয়ারম্যান ফরহাদ সাহেব ওমরাহ করতে মক্কা গেছেন। তখনও মহাসচিবের কাছে বলে গেছেন। এরই মধ্যে ৪ ডিসেম্বর ৩৬ আসনে বিএনপি মনোনয়ন ঘোষণা করলো। আমাদের নড়াইল-২ আসনেও তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এতে আমাদের দলের সারাদেশের নেতাকর্মীরা প্রচণ্ড রকম হতাশ হয়েছে।’

ভেঙে যাওয়া ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আছি। এসব বিষয় নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘এখনো অনেকগুলো আসন খালি আছে। দেখা যাক কি হয়।’

সারাবাংলা/এমএমএইচ/জিজি