ঢাকা: সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে (এক্সিম, এসআইবিএল, এফএসআইবি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক) জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে গভর্নরের দেওয়া এক সপ্তাহের প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, বারবার আশ্বাসের পরও এখনো ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারা তাদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
গ্রাহকেরা জানান, কয়েক মাস নয়, প্রায় দেড় বছর ধরে তারা ব্যাংকের সামনে ঘুরছেন। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ঘোষণা দেন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারবেন। কিন্তু সে সময় পার হয়ে গেলেও ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলতে পারেননি কেউই। তারা প্রশ্ন তোলেন- ‘আর কত সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে?’
গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবে। সরকারি মালিকানাধীন হলেও এটি বেসরকারিভাবে পরিচালিত হবে, ফলে আমানতকারীর অর্থ ও কর্মীদের চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে না বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানতকারী আলিফ রেজা বলেন, ‘বাবা-মায়ের চিকিৎসা, সন্তানের স্কুলের বেতন, ব্যবসার বিনিয়োগ-সবখানেই অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাংক আমাদের নিজেদের টাকাও তুলতে দিচ্ছে না।’
এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক মেরিনা হক জানান, গভর্নরের আশ্বাসের পরও শাখা কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তোলনের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। ‘এভাবে আর কতদিন? আমরা নির্দিষ্ট একটি তারিখ চাই—কবে থেকে টাকা তুলতে পারব?’—প্রশ্ন তার।
লিখিত বক্তব্যে এফএসআইবির গ্রাহক মো. পলাশ বলেন, গত ২৮ নভেম্বর মানববন্ধন থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত গভর্নরকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। আশ্বাস পাওয়ায় কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২ লাখ টাকার নিচে নিরাপত্তা দেওয়া হলেও এফডিআর, ডিপিএস ও সঞ্চয়পত্রের পুরো টাকার বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট ঘোষণা নেই। লিখিত নিশ্চয়তা না পেলে ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবিগুলো হলো-
-
গেজেটের মাধ্যমে সকল আমানতকারীর সম্পূর্ণ আমানতের শতভাগ নিরাপত্তা ঘোষণা।
-
টাকা ফেরত দেওয়ার রোডম্যাপ—কখন, কীভাবে ও কোন ধাপে ফেরত দেওয়া হবে তা দ্রুত প্রকাশ।
-
ব্যাংকের সব লেনদেন স্বাভাবিক করা, প্রয়োজনে মাসিক উত্তোলনসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব।
-
নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে অনলাইন লেনদেন চালু করা।
-
৬৫ বছর ঊর্ধ্ব এবং ক্যান্সার রোগীদের তাৎক্ষণিক সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলনযোগ্য করার নীতিমালা।
-
আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক করা।