Monday 08 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেকর্ড খেলাপি কমাতে পুনর্গঠন ও আংশিক অবলোপনের পরামর্শ গভর্নরের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:২৮ | আপডেট: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) ঋণ পুনর্গঠন ও আংশিক অবলোপন সুবিধা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) এমডিদের সঙ্গে আয়োজিত ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর খেলাপি ঋণ আদায়ে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নজিরবিহীন ৬.৪৪ লাখ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ৩৫.৭৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

সরকার পরিবর্তনের আগে গত জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২.১১ লাখ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১২.৫ শতাংশ)। আর গত বছরের ডিসেম্বরে তা ছিল ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকা (২০.২০ শতাংশ)।

আংশিক অবলোপন ও নীতিগত নির্দেশনা:গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলোকে আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ এরকম মন্দ ও ক্ষতিজনক শ্রেণির ঋণ আংশিক অবলোপন করার অনুমোদন দেয়। মূলত ব্যাংকের ব্যালান্স শিট থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলা‌কে জানান, ঋণগ্রহীতা ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নীতি সহায়তা সার্কুলারগুলো আরও গুরুত্বসহ পরিপালনের জন্য ব্যাংকগুলোর এমডিদের নির্দেশনা দেন গভর্নর।

তিনি আরও বলেন, মন্দ ও ক্ষতিজনক শ্রেণির এবং আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ, এমন ঋণ আংশিক অবলোপন করার জন্য গভর্নর বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন।

সভায় উপস্থিত একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যেসব গ্রাহক তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করতে চায় তাদের নীতিমালা অনুসরণ করে সুবিধা দেওয়ার পরামর্শ দেন গভর্নর।

ঋণের ক্ষেত্রে কৃষি খাতের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। গভর্নর বলেন, ‘দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবস্থান ১৪-১৫ শতাংশ, যদিও মোট ঋণের মাত্র ২ শতাংশ পাচ্ছে এ খাতে।’ তিনি কৃষি ঋণ বাড়িয়ে ১০ শতাংশের বেশি করার পরামর্শ দেন।

এসএমই গ্রাহকদের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর এবং সিএমএসএমই ঋণের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ করতে ব্যাংকগুলোর এমডিদের পরামর্শ দেন গভর্নর।

আহসান এইচ মনসুর এমডিদের আশ্বস্ত করেন, সিএমএসএমই ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশনিং ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করা হবে।

সভার এক পর্যায়ে একজন ব্যাংকপ্রধান ঋণসীমা বাড়ানোর পুরোনো প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চান। এ প্রস্তাবের মধ্যে ছিল ব্যক্তিগত ঋণ ২০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা ও ক্রেডিট কার্ডের সীমা ২০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকা করা। এই প্রস্তাবগুলো কেন এগিয়ে নেওয়া হয়নি, তা গভর্নর ডেপুটি গভর্নরদের কাছে জানতে চান।

পুনঃতফসিল সুবিধা অনুমোদন করেও খেলাপি ঋণ কমছে না: ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ দীর্ঘমেয়াদি পুনঃতফসিল সুবিধা অনুমোদন করা হলেও খেলাপি ঋণ কমছে না, বরং বাড়ছে। এর মূল কারণ বলা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো এই সুবিধা বাস্তবায়নে অনাগ্রহী।

ব্যাংকাররা বলছেন, এ সুবিধায় দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড ও মাত্র ১-২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার বিধান রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনের জন্য নিরাপদ নয়। এতে আমানত ঝুঁকিতে পড়ে এবং ঋণ আদায় কঠিন হয়। অনেক প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতা অনুমোদন পাওয়ার পর ব্যাংকের সঙ্গে আর কোনো আলোচনায় বসছেন না।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, অনুমোদন পাওয়ার পরও ব্যাংক সহযোগিতা করছে না এবং আগের পুনঃতফসিলকারীদের ওপর বাড়তি বোঝা পড়ছে। ফলে স্কিমটি উল্টো ব্যর্থ হয়ে নতুন খেলাপি বাড়ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করতে চাইছে। কিন্তু এই নীতির ত্রুটি দূর না হলে পুনঃতফসিল কার্যকর হবে না, আর খেলাপিও কমবে না।

সারাবাংলা/এসএ/ইআ