সুনামগঞ্জ: জনবল সংকটে সুনামগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ৩৯৬ জন জনবলের মধ্যে এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪২ জন অর্থাৎ প্রায় ৬৫ শতাংশ পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বিশেষ করে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা–সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ চিকিৎসকের পদে সবচেয়ে বড় শূন্যতা রয়েছে। টেকনোলজিস্ট, নার্স, আয়া, দারোয়ান, এমএলএসএস থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয়ের পদেও শূন্যতা বিরাজ করছে। ফলে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীর অবস্থা সামান্য জটিল হলেই তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটি যেন এখন হাসপাতালের ‘রুটিন কর্মকাণ্ড’। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, অনেকে চিকিৎসা না করেই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাওর অধ্যুষিত দরিদ্র মানুষের জেলা সুনামগঞ্জে উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসাব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় জেলার এই প্রধান হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকে বেশি। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এখানে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটছেন। সেগুলোর মানও ততটা সন্তোষজনক নয়। শেষ পর্যন্ত রোগীদের বেশিরভাগকে সিলেটে যেতেই হচ্ছে।
সদর হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্টের ১১টি পদের মধ্যে ৭টি, জুনিয়র কনসালটেন্টের ১২টির মধ্যে ৬টি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের ১২টির মধ্যে ৬টি পদ খালি। অ্যানেস্থেটিস্ট ৪টির মধ্যে ৩টি শূন্য। জরুরি বিভাগেও সংকট তীব্র-ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের ৪টির মধ্যে ২টি, মেডিকেল অফিসারের ১৭টির মধ্যে ১৩টি পদ খালি।
নার্সিং পদের অবস্থা আরও করুণ। সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২২৬টি পদের মধ্যে ১৪১টি শূন্য। স্টাফ নার্স ১১ জনের মধ্যে নেই ৮ জন। ১২ মিডওয়াইফের মধ্যে ৯ জন নেই। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১১টির মধ্যে ৩টি শূন্য। ১১ জন আয়ার কেউ নেই। ওয়ার্ডবয় ১১ পদের সবগুলোই শূন্য। দারোয়ান ও ক্লিনিং স্টাফের ক্ষেত্রেও একই চিত্র।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিনা বেগম বলেন, ‘হাসপাতালে গেছি ভালা ডাক্তারের লাইগা, গিয়া শুনি বড় ডাক্তার নাই।’ একই ওয়ার্ডের আজিমুন নেসা বলেন, ‘গরিব মানুষ। পরতি মাসে ভর্তি হইতে হয়। এইবার ভালা চিকিৎসা পাইছিলাম না। ওষুধও বাইর থাইকা কিনছি।’ বাহাদুরপুর গ্রামের আমিরুল হক বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা বড় অ্যাক্সিডেন্টের রোগী নিলেই সিলেটে পাঠায়। অনেক রোগী পথেই মারা যায়।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটি হাওর অঞ্চলের হাসপাতাল। বাইরের চিকিৎসকেরা বেশিদিন থাকতে চান না। স্থানীয় চিকিৎসকেরা না এলে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব না। আমরা প্রতি মাসেই শূন্য পদ পূরণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দিচ্ছি।’
আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসক ও নার্সসহ জরুরি জনবল সংকট থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তবু আমরা প্রতিদিনই ইনডোর–আউটডোরে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’