সিলেট: অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ। তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ে সম্পদের তথ্য না দেওয়ায় কিংবা সময় বাড়ানোর আবেদন না করায় কমিশনের অনুমোদনের ভিত্তিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গতকাল মামলাটি করেন। বিধি অনুযায়ী তদন্ত ও পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
জানা যায়, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে সিসিকের মেয়র পদে প্রায় আট মাস দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দুদকের অনুসন্ধানকালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নিজ নামে লন্ডনে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যেমন—Ilford, Essex-এর ৪ হাজার বর্গফুটের বাড়ি, Talwin St. London-এর ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও Kipling Indian Restaurant-এর তথ্য গোপনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ ছাড়া নির্বাচনী হলফনামায় পূর্বাচলে রাজউকের বরাদ্দ করা পাঁচ কাঠা জমির তথ্য গোপন করেন।
অনুসন্ধানকালে আরও জানা যায়, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ সালে দাখিল করা আয়কর রিটার্ন অনুসারে তার মোট সম্পদ ৮৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮ টাকা। কিন্তু এই টাকা তিনি কীভাবে অর্জন করেন, তার কোনো সঠিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং মেয়র পদে বেতন ও সম্মানি ভাতা বাবদ ১০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা প্রাপ্ত হন, যা গ্রহণযোগ্য। তবে মোট অগ্রহণযোগ্য নিট সম্পদ ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮ টাকা, যা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নামে ইস্যু করা সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করার জন্য গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়, ফলে নিয়মানুযায়ী তার বাসার গেটে সাক্ষী রেখে সম্পদ বিবরণীর মূল ফরম (ফরম নং: ০০৬৫৫৭) লটকিয়ে জারি করা হয়। এসময় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন জানান, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে এই ঠিকানায় বসবাস করেন না, লন্ডনেই তার স্থায়ী বসবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য আছে।
এ বিষয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার অবৈধ কোনো সম্পদ নেই। যা আছে, সবই লিগ্যাল। ট্যাক্স দেওয়া। দুদকের নোটিশের খবর পেয়ে দেশে আমার আইনজীবীর মাধ্যমে হিসাব দাখিল করার পাশাপাশি সময় চাওয়া হয়েছে।’
রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে দখলদার অবৈধ ইউনূস সরকার এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও হয়রানিমূলক মামলা করেছে। দেশে কখনো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দেন।