রাজবাড়ী: রাজবাড়ী পাংশায় চাঁদাবাজির একটি মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি এবং সাবেক রেলমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিমের বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশিক মাহমুদ ওরফে মিতুল হাকিমসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজবাড়ীর পাংশা আমলি আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসীন হাসান এ আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, মিতুল হাকিমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় গত ২৭ ডিসেম্বর বসত বাড়িতে প্রবেশ করে ককটেল ফাটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা দাবি করে। প্রাণভয়ে তাদেরকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। আরও ৫ লাখ টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর পাংশা আমলী আদালতে ৩১ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন পাংশা পৌরসভার মাগুরাডাঙ্গি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন খন্দকার।
মামলাটির তদন্ত শেষে ফরিদপুর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সুনীল কুমার কর্মকার কুড়াপাড়া গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে সাকিব এবং কুড়াপাড়ার চশেন চন্দ্র দাসের ছেলে সুজিৎ চন্দ্র দাসকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দিয়ে ২৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিট অভিযুক্তরা হলেন সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে আশিক মাহমুদ ওরফে মিতুল হাকিম, মাগুরাডাঙ্গি গ্রামের দ্বীনিব কুন্ডুর ছেলে দীপক কুন্ডু, রঘুনাথপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ফারুক সরদার, মৈশালা গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে সফিক, রঘুনাথপুর গ্রামের ঝন্টু সরদারের ছেলে জুয়েল, আক্কাস আলী সরদারের ছেলে মোহাম্মদ, মৈশালার আহমদ আলীর ছেলে সাইফুল, বড়গাছি গ্রামের গফুর সরদারের ছেলে চাঁদ আলী সরদার, মাগুরাডাঙ্গির ইসলাম মন্ডলের ছেলে আল আমিন, হেনা শেখের ছেলে রবিন, মৈত্রডাঙ্গা গ্রামের মৃত আছাই মন্ডলের ছেলে মোমিন মন্ডল, লিটন মন্ডল, বড়গাছির আজিজ মন্ডলের ছেলে শিপলু, রঘুনাথপুর গ্রামের ছানাই সরদারের ছেলে রেজা, ইমারত সরদারের ছেলে লিটন, শাহমীর গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে লিটন মন্ডল, রঘুনাথপুর গ্রামের খলিল ড্রাইভারের ছেলে মনোয়ার হোসেন জনি, মুচাই মন্ডলের ছেলে ওবায়দুর মন্ডল, দুধশ্বরের জব্বার মন্ডলের ছেলে বাদশা মন্ডল, মৈশালার বাদশা মন্ডলের ছেলে আসিব মন্ডল, মাছপাড়া গ্রামের কেদরা চন্দ্র মন্ডলের ছেলে দিলীপ চন্দ্র দাস, গুধিবাড়ীর রফিক বিশ্বাসের ছেলে সাদ্দাম, মাগুরাডাঙ্গির প্রয়াত মুন্তাজ শেখের ছেলে আবুল হোসেন, আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক রাজা, বক্কার, শাহিন শেখের ছেলে আরিফ, ময়েন উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে হাসান, রুপিয়াট গ্রামের এবনের ছেলে মাসুদ ও মাগুরাডাঙ্গির আব্দুল জলিল হাকিমের ছেলে রুমি হাকিম।
বাদী পক্ষের আইনজীবি রাজবাড়ী আদালতের অ্যাড. এ কে এম শহিদুজ্জামান ও অ্যাড. জাহিদ উদ্দিন মোল্যা বলেন, ‘মামলায় ৩১জনকে আসামি করা হয়। পিবিআই তদন্ত করে দুইজনকে চার্জশির্ট থেকে বাদ দিয়ে ২৯ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বিচারক তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন।‘
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, তার ছেলে মিতুল হাকিমসহ পুরো পরিবার পলাতক রয়েছেন।