ঢাকা: ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর। সবদিকে দিয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে মিত্রবাহিনী। দিনটি ছিল তাদের সামনে শুধুই ঢাকা দখলের লড়াই। এদিন বাইরে থেকে হানাদার বাহিনীর প্রবেশও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া, মিত্রবাহিনী একে একে আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি, চাঁদপুর ও ময়মনসিংহ দখলে নেয়।
একাত্তরের এইদিনে সকালবেলা ঢাকায় হানাদার বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর থেকে প্রথমবারের মতো জেনারেল নিয়াজী স্বীকার করেন যে, পরিস্থিতি খুবই সংকটপূর্ণ। আকাশে শত্রুর প্রভুত্বের কারণে পুনর্বিন্যাস সম্ভব নয় বলে একটি সংকেতবাণীও পাঠানো হয় রাওয়ালপিন্ডিতে।
দ্রুত মুক্ত হতে থাকে দেশের একের পর এক অঞ্চল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পাকিস্তানকে সহযোগিতার পদক্ষেপ নেয়। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হতে আদেশ দেন। উদ্দেশ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া।
তবে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ, বীর সন্তানদের মনোবল ভেঙে দেওয়া মোটেও সহজ কাজ ছিল না। এদিন শত্রুমুক্ত- দাউদকান্দি, গাইবান্ধা, কপিলমুনি, ত্রিশাল, নকলা, ঈশ্বরগঞ্জ, নেত্রকোণা, পাইকগাছা, কুমারখালী, শ্রীপুর, অভয়নগর, পূর্বধলা, চট্টগ্রামের নাজিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল।
দাউদকান্দি শত্রমুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত মেঘনার সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। আগেরদিন কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর হামলায় টিকতে না পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।