ঢাকা: প্রকৌশল শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার পাশাপাশি পরিবেশগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘অ্যাক্রেডিটেশনের মাধ্যমে প্রকৌশল শিক্ষায় গুণগত মান নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ৪র্থ আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে তিনি এ আহ্বান জানান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে মানসম্পন্ন প্রকৌশল শিক্ষা তখনই নিশ্চিত হবে যখন তা পরিবেশগত ন্যায়বিচার, সামাজিক সাম্য, জলবায়ু ঝুঁকি প্রশমন এবং স্থায়িত্ব—সবকিছুকে সমান গুরুত্ব দেবে।’
ঢাকা শহরের ভূমিকম্প ঝুঁকি, নদীভাঙন, জলজটসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় প্রকৌশল উদ্যোগগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত প্রভাব ও স্থানীয় প্রয়োজন বিবেচনায় নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৌশলীরা দেশের উন্নয়ন ধারা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই স্বীকৃতি প্রক্রিয়ায় নৈতিক দায়িত্ববোধ, পরিবেশ-সচেতনতা, এবং প্রচলিত অবকাঠামো পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে নতুন সমাধান খোঁজার দক্ষতা যুক্ত করা জরুরি।’
বাড়তে থাকা প্রকৌশল স্নাতক সংখ্যা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ তুলে তিনি আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে পাঠ্যক্রম সামঞ্জস্যের ওপর জোর দেন।
সিম্পোজিয়াম থেকে পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ জোরদার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে কার্যকর সুপারিশ মিলবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার মানোন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। তাত্ত্বিক জ্ঞান বাড়লেও ব্যবহারিক দক্ষতা ও শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়ে গেছে।’
শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি ব্যবধান কমলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আরলিংটনের সেং হুয়াং এনডাউড প্রফেসর ড. নুর ইয়াজদানি, ডাবলিন অ্যাকর্ডের চেয়ার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মেগাত জোহরি মেগাত মোহদ নূর এবং ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. সাব্বির মোস্তফা খান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএইটি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. তানভীর মঞ্জুর।
দুই দিনের সিম্পোজিয়াম শেষে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকৌশল শিক্ষা আধুনিকায়ন এবং স্বীকৃতি কাঠামোতে উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। দিনব্যাপী সেশনের শেষে অংশগ্রহণকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।