Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’ বিমান বুঝে পাবে ২০ আগস্ট


১৫ জুলাই ২০১৮ ০৮:১৭

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রঙের প্রলেপ, নাম ফলক, বিমানের লোগো, বাংলাদেশের পতাকা আঁকা- সব কার্যক্রম শেষ। এখন অপেক্ষা কেবল বাংলাদেশে উড়ে আসার। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০ আগস্ট বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বুঝে পাবে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২০০৮ সালে চারটি ড্রিমলাইনারসহ মোট ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। চুক্তি অনুযায়ী, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেল চারটি এবং বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেল দু’টিসহ মোট ছয়টি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানকে সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি।

সে হিসাবে প্রথম ড্রিমলাইনার আসছে আগস্ট মাসে। দ্বিতীয়টি আসবে নভেম্বরে এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আরও দু’টি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে তারা। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম বিশ্বের সর্বাধুনিক এই উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার আকাশবীণা’তে থাকছে সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। যাত্রীরা উড়োজাহাজের ভেতরেই পাবেন ওয়াইফাই সুবিধা। বিশেষ ফোনসেটের মাধ্যমে উড়োজাহাজ চলাকালে কথা বলার সুবিধাও থাকছে এই এয়ারক্রাফটের ভেতরে।

এই উড়োজাহাজটি বোয়িং ৭৬৭’র চেয়েও ২০ শতাংশ কম জ্বালানিতে চলবে। বিমানটির মোট আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি, বাকি ২৪৭টি ইকোনোমি ক্লাস।

সূত্র জানায়, প্রথমদিন থেকেই নিজস্ব বৈমানিকরা উড়োজাহাজটি চালাবেন। তারা সিঙ্গাপুরে বোয়িংয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে ১৪ জন বৈমানিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এই সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ সারাবাংলাকে বলেন,  আকাশবীনার সব ধরনের কাজ শেষ, এখন সে কেবল বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায়। উড়োজাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বোয়িং কারখানা থেকে লন্ডনে আনা হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এয়ারশো ফার্নবোরোতে উড়োজাহাজটি প্রদর্শিত হবে।

তিনি বলেন, সেখানে এই উড়োজাহাজটি বোয়িং এর প্রোডাক্ট হিসেবে প্রদর্শিত হবে আগামী ১৬ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত। বোয়িং কোম্পানি এই ড্রিমলাইনারকে নিয়ে এসেছে বিশ্বের অ্যাভিয়েশন বিটের স্টেক হোল্ডারদের প্রদর্শণ করার জন্য। এজন্য তারা বিমান কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নিয়েছে এবং সেখানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকবেন।

এয়ারশো শেষে ড্রিমলাইনার ৭৮৭ আবার যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে কারখানায় নিয়ে যাওয়া হবে। এরপরই বিমান বাংলাদেশের একটি অগ্রবর্তী দল আগামী ১০ আগস্ট সিয়াটলে যাবে উড়োজাহাজটি বুঝে নেবার জন্য। সেখানে তাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে এবং ২০ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান বাংলাদেশের সে প্রতিনিধিদলের কাছে বোয়িং কারখানা থেকে ডেলিভারি হবে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। আর তারপরই সরাসরি সেখান থেকে ঢাকায় আসবে স্বপ্নের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার নাম দিয়েছেন ‘আকাশবীণা’।

ড্রিমলাইনার ৭৮৭ কে কেন স্বপ্নের উড়োজাহাজ বলা হচ্ছে- জানতে চাইলে শাকিল মেরাজ বলেন, নতুন ড্রিমলাইনারগুলোতে যাত্রীদের জন্য ফ্লাইটের সময়ে যেসব সুবিধা থাকছে, সেগুলো আগে ছিল না। যেমন ইন্টারনেট ব্যবহার ও ফোন কল করার সুবিধা। দেখতে পাবেন বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি চ্যানেলের লাইভ সম্প্রচার। আর এসব সুবিধার জন্য এয়ারলাইন্সটি ইতোমধ্যে বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সার্ভিসটি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ফ্লাইট চলাকালীন যাত্রীরা থ্রিজি গতির ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন আর বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যাত্রীদেরকে দেওয়া হবে ফ্রি ২০ মেগাবাইট ডাটা। প্যানাসনিক অ্যাভিয়েশন করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে- যারা ২৫টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফারের কাজ করবে।

ড্রিমলাইনার ৭৮৭ এ রয়েছে থ্রিডি রুট ম্যাপ। এর মাধ্যমে ডিসপ্লেতে উড়োজাহাজটি যেখান দিয়ে উড়ে যাবে তার নিচের সব স্থাপনা দেখতে পাবেন যাত্রীরা।

মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘এই এয়ারক্রাফট সার্বক্ষণিকভাবে আকাশ বা ভূমি যেখানেই থাকুক না কেন ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেটের আওতায় থাকবে। এয়ারক্রাফটের প্রাথমিক প্যারামিটার কিভাবে চলছে, কোন ফাংশন কিভাবে কাজ করছে- প্রতিনিয়ত তথ্য আপডেট হতে থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এয়ারক্রাফটির কোনো টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি শনাক্ত করা যাবে এবং ভূমিতে ফেরা মাত্র তার জন্য আমরা ‘রেকটিফাই মেজার্স’ নিতে পারব, যেটা আমাদের অন্য কোনো উড়োজাহাজে নেই।’

ড্রিমলাইনার আকাশপথে পরিবহন সেবায় নতুন অনুভূতি দেবে মন্তব্য করে শাকিল মেরাজ বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে বিমান বাংলাদেশ তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। কারণ ড্রিমলাইনার আকাশবীণা ৩০ থেকে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় ফ্লাইট পরিচালনা করলেও যাত্রীরা অনুভব করবেন মাটি থেকে ১৬ হাজার ফুটের দূরত্বের আবহ। এতে ভ্রমণের ক্লান্তি তাদের স্পর্শ করবে না। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ক্লান্তিতে ভুগবেন না তারা- যেটা ড্রিমলাইনারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এক কথায় আমরা বলছি, বিমানযাত্রায় পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে ড্রিমলাইনার আকাশবীণা।’

বিমান বাংলাদেশের বহরে যোগ হতে যাওয়া চারটি উড়োজাহাজের নামও রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো হচ্ছে ‘আকাশবীণা’, ‘হংস বলাকা’, ‘গাঙচিল’ ও ‘রাজহংস’।

সারাবাংলা/এটি

আকাশবীণা ড্রিমলাইনার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর