সহপাঠীর হাত ধরার অপরাধে ২ ঢাবি শিক্ষার্থীকে পিটুনি দিল ছাত্রলীগ
১৫ জুলাই ২০১৮ ০৯:০০
।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাবি : সহপাঠীর হাত ধরে দাঁড়ানোর অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবসিক ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
মারধরের শিকার দুই শিক্ষার্থী হলেন অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আসাদ ও লীনা।
ভুক্তভোগী ছাত্রী লীনা জানান, তিনি ও তার সহপাঠী আসাদুজ্জামান শনিবার (১৪ জুলাই) বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের (রেজিস্টার বিল্ডিং) সামনে একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা কার্জন হলের দিকে যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন। এমন সময় ১০-১২ জন ছাত্র তাদের কাছে আসেন এবং তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিনা তা জানতে চান। প্রমাণ হিসেবে পরিচয়পত্রও দেখাতে বলেন। জবাবে, পরিচয়পত্র দেখান তারা দুজন। এর পরেও ওই ১০-১২ জন অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে আসাদুজ্জামানকে মারধর শুরু করেন। এসময় লীনা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
মারধরের পরই সূর্যসেন হলের ভেতরে দৌঁড় দেন ওই ১০-১২ জন। মারধরের শিকার আসাদুজ্জামানও তাদের পেছনে যান এবং মারধরের কারণ জানতে চান। এ পর্যায়ে তারা আসাদুজ্জামানকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে মারধর শুরু করে। লীনা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও স্টাম্প দিয়ে মারা হয়। মারধরের ফলে লীনার পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীকে ঘটনাটি জানাতে রাত ৯টার দিকে ফোন করেন লীনা। এসময় প্রক্টর ওই ছাত্রী এত রাত পর্যন্ত বাইরে কেন এবং তিনি কোন হলের আবাসিক ইত্যাদি প্রশ্ন করেন।
তবে প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি এত দেরি করে কেন আমাকে জানিয়েছে। দ্রুত জানালে তো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’
পরে রাত পৌনে দশটার দিকে সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাকসুদ কামাল এসে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন। তাদেরকে তিনি ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রক্টর বরাবর একটি দরখাস্ত লিখতে বলেন। আহত ওই দুই শিক্ষার্থীকে তিনি হলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন এবং তাদের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী লীনা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমাদের কেন মারা হলো শুধু সেটুকু জানতে চাই। বিনা কারণে প্রথম বর্ষের ছাত্ররা আমাদের মারল। কেন মারল, আমাদের ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’
এ বিষয়ে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন অনুসারে ন্যায্য বিচার করবেন বলেও জানান এই শিক্ষক। হলের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দোষীদের সনাক্ত করা হবে। ভবিষ্যতে যেন ঢাবি ক্যাম্পাসে আর এমন ঘটনা না ঘটে তেমন বিচার করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা দুইজন মারধরকারীর পরিচয় দিয়েছেন। এরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের সিফাত উল্লাহ ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মোল্লা মো. আলে ইমরান পলাশ।
সিফাত উল্লাহ সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম সরোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। হল ছাত্রলীগের এক পদধারী নেতা জানান, সিফাত উল্লাহ ঘটনাস্থলেই ছিলেন।
অন্যদিকে আলে ইমরান পলাশ সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ ঘটনা জানেন না বলে দাবি করেন।
সারাবাংলা/কেকে/এসএমএন